Insight Zone

আসমা বিনতে মারওয়ানকে কি হত্যা করা হয়েছে?

আসমা বিনতে মারওয়ানকে কি হত্যা করা হয়েছে?

আসমা বিনতে মারওয়ানকে কি হত্যা করা হয়েছে?

কথিত মুক্তমণা, নাস্তিকরা ইসলামের নামে অসংখ্য অভিযোগ করেন। তাদের অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি অভিযোগ হলো রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করায় এক মহিলা কবি ‘আসমা বিনতে মারওয়ান’কে ঘুমন্ত অবস্থায় নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই অভিযোগের সত্যতা কতটুকু তা দেখে নেয়া যাক।

অভিযোগের উৎস;

আল্লামা ইদরিস কান্ধলভী লিখিত সীরাতুল মুস্তফা সহ আরো কয়েকটি সিরাতে এই ঘটনাটি উল্লেখ রয়েছে যে , আসমা বিনতে মারওয়ান রাসুল (সাঃ) এর বিরুদ্ধে কুৎসামূলক কবিতা রচনা করত এবং রাসুল (সাঃ) কে নানাভাবে কষ্ট দিত। মানুষকে নবী (সাঃ) এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী করে তুলতো। আর এই কারণেই উমায়র (রাঃ) তাকে তরবারি দিয়ে হত্যা করেন। 1

আসমা বিনতে মারওয়ানকে হত্যা করা সংক্রান্ত যে বর্ণণা রয়েছে তা আসলে মাওযু বা জাল বর্ণণা। এটি বর্ণনা করেছে মুহাম্মাদ ইবন হাজ্জাজ যার ব্যাপারে; 

ইমাম বুখারী(র.) বলেছেন, তার হাদিস প্রত্যাখান করা হবে।

ইবন মাঈন(র.) বলেছেন, সে একজন  দুষ্টু মিথ্যাবাদী।

দারাকুতনী(র.) বলেছেন,

সে একজন মিথ্যাবাদী। অন্যত্র বলেছেন, সে সিকাহ (নির্ভরযোগ্য) নয়। 2

ইবন ‘আদি বলেছেন,

মুহাম্মদ ইবনুল হাজ্জাজ সেই মহিলার সম্পর্কে হাদিস জাল করেছেন যে আল্লাহর রাসুল্ললাহ (সাঃ) কে ব্যাঙ্গ করতো। হাজ্জাজ এর বর্ণণা অনুযায়ী ঐ মহিলার হত্যাকান্ডের পর রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন যে, “আপনি যা করেছেন তার বৈধতা এমন কিছু যা কেউ বিতর্ক করতে পারে না। 3

এই হাদীসটি শাইখ আল-আলবানী (রহঃ) আদ-দাইফাহ (৬০১৩) গ্রন্থেও উল্লেখ করেছেন; তিনি বলেন,

এটা বানোয়াট (মাওযু‘)। 4

এই ঘটনাটি ওয়াকিদি আল মাগাযীতে (পৃষ্ঠা ১৭৩) বর্ণনা করেছেন। তার বরাতে আল ক্বাদাঈ (৮৫৮) বর্ণনা করেছেন। ইমাম আহমাদ(র.) ওয়াকিদির ব্যাপারে বলেছেন, যার পুরো নাম ছিল মুহাম্মাদ ইবন উমার ইবন ওয়াকিদি,

সে একজন মিথ্যাবাদী, সে হাদিস পরিবর্তন করে।

ইবন মাঈন(র.) বলেছেন,

সে (ওয়াকিদি) বিশ্বস্ত নয়।  অন্যত্র তিনি বলেছেন, তার বর্ণিত হাদিস লিপিবিদ্ধ করা যাবে না।

ইমাম বুখারী(র.) এবং আবু হাতিম(র.) বলেছেন, সে মাতরুক (প্রত্যাখ্যাত)।

আবু হাতিম(র.) এবং নাসাঈ(র.) বলেছেন, সে হাদিস জাল করে। 

ইবন ‘আদি(র.) বলেছেন,তার বর্ণিত হাদিস অদ্ভুত এবং সমস্যাযুক্ত। 

ইবন মাদিনি(র.) বলেছেন, ওয়াকিদি হাদিস জাল করে।5

ইমাম দারা কুতনী, ইমাম ইবন যুরাইক আল মাকদিসি, ইমাম আবু নুআইম আল আসবাহানী প্রমুখ মুহাদ্দিস ওয়াকিদিকে দুর্বল রাবী বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম দারাকুতনি (রহ) তার ‘al-Ḍuʿafāʾ wa-l-matrūkūn’ গ্রন্থে বলেছেন,

তাকে নিয়ে ইখতেলাফ আছে, সে হাদিসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দূর্বল। 6

ইমাম ইবন যুরাইক আল মাকদিসি ‘Man takallama fī-hi al-Dāraquṭnī fī Kitāb al-sunan’ গ্রন্থে বলেন,

ওয়াকিদি এবং ইসহাক ইবনে হাজম হাদিসের ক্ষেত্রে যঈফ। 6

ইমাম আবু নুআইম আল আসবাহানী ‘al-Ḍuʿafā’ গ্রন্থে ইমাম বুখারীর বরাত দিয়ে বলেন,

হাদিসের ক্ষেত্রে ওয়াকিদি পরিত্যাজ্য বা গ্রহণযোগ্য নয় 6

নাজম আবদ আল-রহমান খালাফ তার ‘মুজাম আল-জারহ ওয়া-ল-তা’দিল লি-রিজাল আল-সুনান আল-কুবরা’ গ্রন্থে বলেন,

ওয়াকিদির কথা গ্রহণযোগ্য নয়, সে হাদিসের ক্ষেত্রে শক্তিশালী নয়, তার কথা দলিল নয়, তার কথা তোমরা অনুসরণ করিও না। 6

সীরাত গ্রন্থে মিথ্যা ঘটনার উল্লেখ থাকার কারণ

স্কলারগণ রাসুল (সাঃ) সম্পর্কিত সমস্ত ঘটনা লিপিবদ্ধ করে রাখেন যাতে করে তা হারিয়ে না যায়। এই কারণে স্কলারগণ যা যা শুনেন তা উল্লেখ করে রাখেন এবং পরবর্তীতে স্কলারগণ সেই ঘটনাগুলো তাহকিক করেন বা সত্য মিথ্যা যাচাই করেন। এভাবে আমরা কোন কোন ঘটনা মিথ্যা, বানোয়াট এবং কোন কোন ঘটনা সত্য তা নির্ধারত করতে পারি। কিন্তু যদি সমস্ত কথা উল্লেখ না থাকতো তবে সত্য মিথ্যা নির্ধারণ করা অসম্ভব হয়ে পড়তো। নাস্তিকরা যে সীরাত গ্রন্থ থেকে আসমা বিনতে মারওয়ানকে হত্যার অভিযোগের রেফারেন্স নিয়ে থাকে সেই সীরাত গন্থেই বলা হয়েছে যে, 

আর যে সকল মুহাদ্দিস নিজেদের সংকলন গ্রন্থকে সহীহ বলে দাবি করেননি তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল যাতে হাদীস ভাণ্ডার জমা হয়ে যায় এবং মহানবী (সা) থেকে যা কিছু উদ্ধৃত হয়েছে তা একবার সংরক্ষিত হয়ে যাক। তাতে পরবর্তীতে এভাবে বাছ-বিচার করা হবে যে, সনদ যখন বিদ্যমান তখন এ সম্পর্কিত নির্ধারিত কষ্টিপাথরে তা যাচাই-বাছাই করা জটিল কোন বিষয় হবে না। মোটকথা, এ মণীষীগণ হাদীস) সংগ্রহ ও সংকলন করার ব্যাপারে পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করেছিলেন এবং চেষ্টা করেছিলেন যাতে কোন হাদীস বাদ না যায় ।

সম্মানিত মুহাদ্দিসগণ একদিকে হাদীসের বিশুদ্ধতা নিরূপণের মূল নীতিসমূহ নির্ধারণ করেন—যাতে কোন জাল কথা নবী (সা)-এর প্রতি আরোপিত না হয় । নবী (সা)-এর প্রতি মিথ্যা আরোপ স্বেচ্ছাকৃত না হলেও তবুও তা মিথ্যা এবং অবশ্যই ভ্রান্ত বলে গণ্য হবে। অপরদিকে তাঁরা একইভাবে যা কিছু সনদসহ মহানবী (সা)-এর প্রতি আরোপিত হয়েছে, তা-ই একত্রিত করেছেন যাতে নবী (সা)-এর কোন বিষয়, কোন বাক্য অজানা থেকে না যায়, হারিয়ে না যায় যা তাঁর পবিত্র মুখ নিঃসৃত। এর কোনটির সনদ সুসংবদ্ধ না থাকলেও, সম্ভাবনা থাকে যে, ভিন্ন কোন সনদে এ হাদীস পাওয়া যাবে। তখন সনদ বর্ণনাকারীর সংখ্যা ইত্যাদি দেখে পরবর্তী আলিমগণ নিজেরাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন যে, এ হাদীস কোন্ পর্যায়ের হতে পারে। 7

একারণে স্বয়ং সীরাত গ্রন্থের লেখকগণই বলেন যে,

কোনো লিখা দলিল হিসেবে গ্রহণ করার পূর্বে তা যাচাই করে নিতে। একই সীরাত সীরাতে মুস্তফাতেই এই সীরাতে মুস্তফাতেই উল্লেখ রয়েছে যে, গ্রহণ করার পূর্বে যথেষ্ট যাচাই-বাছাই করে দেখ যে, হাদিসটি সত্য, নাকি জাল।8

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কিত আরো অভিযোগের জবাব জানতে পড়ুনঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কিত – Insight Zone (insightzonebd.com)

রেফারেন্স
  1. সীরাতুল মুস্তফা; খন্ড নংঃ ২; পৃষ্ঠা নংঃ ১৪৪ []
  2. মিযানুল ই’তিদাল ৩/৫০৯ []
  3. ইবনুল জাওযী রচিত আল-মাওদুআত 3/18 []
  4. ‘Asma bint Marwan: Did the Prophet Order Her Killing? – Islam Question & Answer (islamqa.info) []
  5. মিযানুল ই’তিদাল ৩/৬৬৩ []
  6. محمد بن عمر الواقدي – The Hadith Transmitters Encyclopedia (hawramani.com) [][][][]
  7. সীরাতে মুস্তফা; খন্ডঃ ১, পৃষ্ঠা নংঃ ১৮ []
  8. সীরাতে মুস্তফা; খন্ডঃ ১; পৃষ্ঠা নং; ২৩ []
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Scroll to Top
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x