মাওলানা মওদুদীর সাথে মতবিরোধের কারণ
মাওলানা মওদুদীর সাথে মতবিরোধের কারণ
সংক্ষিপ্ত পরিচয়
শায়েখ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী (রহ.) বিংশ শতাব্দীর একজন প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯০৩সালে জন্মগ্রহণ করেন। উইলফ্রেড ক্যান্টওয়েল স্মিথ নামের এক ইসলামি চিন্তাবিদ মাওলানা মওদুদী’কে আধুনিক ইসলামের সবচেয়ে নিয়মতান্ত্রিক চিন্তাবিদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।[1]Review of Maududi and the making of Islamic fundamentalism” Bulletin of the School of Oriental and African Studies। University of London এশিয়ার বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন ‘জামায়েতে ইসলামির প্রতিষ্ঠিতা’ মাওলানা মওদুদী(রহ.)। তিনি একই সাথে আলোচিত এবং সমালোচিত একজন ইসলামি স্কলার। ইসলাম সম্পর্কিত তার লিখিত বহুল গ্রন্থ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়ে চিন্তার ক্ষেত্রে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শায়েখ সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী(রহ.) লিখিত তাফসীরের নাম, তাফহিমুল কুরআন।
ওলামায়ে দেওবন্দের সাথে মতবিরোধের কারণ
(বিস্তারিত জানতে পড়ুন; আলোচিত অভিযোগের কাঙ্ক্ষিত জবাব। লেখকঃ আসলাম হোসাইন
১৯২৪ সালে মাওলানা মওদূদি(রহ.) জমিয়েত উলামায়ে হিন্দের ‘আল জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব নেন। তৎকালীন হিন্দু কংগ্রেসের সর্ব ভারতীয় জাতীয়তা আন্দোলনে মুসলিম জাতি বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল। কংগ্রেস চেয়েছিল হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান সকল ধর্মের লোকের ভিত্তিতে একটা ভৌগলিক ও আঞ্চলিক জাতি গঠন করতে। হিন্দু কংগ্রেসের সাথে ‘জমিয়তে উলামেয় হিন্দ’ একমত পোশন করে এবং ‘আল-জমিয়ত’ পত্রিকার সম্পাদক সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী (রহ.) কে কংগ্রেসের পক্ষে প্রোপাগান্ডা করতে বিভিন্ন উপায়ে চাপ দেওয়া হয়। কিন্ত সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী (রহ.) কংগ্রেসের এই আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নেই। এবং ‘আল জমিয়েত’র সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে।
হিন্দু কংগ্রেস তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য দেওবন্দ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)কে দিয়ে ‘এক জাতীয়তাবাদ’ নামক একটি বই লিখায়। উক্ত বইতে মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, উপমহাদেশে বসবাসকারী হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান সকল ধর্মের লোক সবাই এক জাতি। উপমহাদেশের আলিম সমাজ মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.)’র এহেন বক্তব্যের তিব্র সমালোচনা করেন। মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী (রহ.) এমন বক্তব্য শুনে আল্লামা ইকবাল তিব্র সমালোচনা করে বলেন, “তাহলে কি মুহাম্মদ (সাঃ) ও আবু লাহাব আরবি বলে কি একই জাতি?”
মুসলিমদের এই কঠিন সময়ে মাওলানা মওদূদি (রহ.) চুপ করে বসে থাকতে পারেনি। তিনি চিন্তা করলেন ইংরেজদের হাতে ইসলামের যে ক্ষতি সাধন হয়েছে তার থেকে বহু গুণ বেশি ক্ষতি সাধন হবে যদি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সহ সকল ধর্মের ভিত্তিতে এক জাতি গঠিত হয়। কারণ, তৎকালীন ভারতবর্ষে মুসলিমদের সংখ্যা ছিলো ১০ কোটি। এবং হিন্দুদের সংখ্যা ছিলো ৩০ কোটি। ১০ কোটি মুসলিমদের সাথে ৩০ কোটি হিন্দুদের যদি এক জাতি গঠিত হয় তাহলে তিনগুণ ভোটের জোরে চিরদিন হিন্দুরাই ক্ষমতায় থাকবে। ফলস্রুতিতে সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদী (রহ.) ‘ইসলাম ও জাতীয়তাবাদ’ নামে একটি বই লিখে কুরআন ও হাদিসে আলোকে প্রমাণ করেন যে, জাতি গঠিত হবে বিশ্বাসের মাধ্যমে। যারা মুহাম্মদ (সাঃ) কে শেষ নবী হিসেব মেনে চলে তারা এক জাতী। আর যারা মেনে চলে না তারা অন্য জাতী তথা কাফের। মাওলানা মওদূদির যুক্তিযুক্ত ব্যাক্ষার ফলে মাওলানা মাদানী সাহেবের বক্তব্য ভুল প্রমাণিত হয় এবং ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিমগণ দ্বিজাতিতত্ত্বের পক্ষ নিয়ে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। যার ফলে হিন্দু কংগ্রেসও দ্বিজাতিতত্ত্ব মেনে নিতে বাধ্য হয়। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালে মুসলিম সংখ্যগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে গঠিত হয় পাকিস্থান নামক রাষ্ট্র।
মুসলিমদের এই সংকটময় মুহূর্তে মাওলানা মওদূদি (রহ.) যে অবদান রেখেছিলেন তা নিঃসন্দেহে মুসলিমদের নিকট চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। মওদূদির এই অবদানের ফলে মাওলানা মাদানী সাহেবদের উচিত ছিলো তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কিন্তু তারা তা না করে উল্টো মাওলানার প্রতি বিদ্ধেষী হয়ে উঠেন। এবং আজীবন মাওলানা মওদূদির বিপক্ষে ফতোয়াবাজির মেশিনগান থেকে ভিত্তিহীন, আক্রমণাত্মক, মিথ্যা ফতোয়ার গোলাবর্ষণ করতে থাকে। যা আজ পর্যন্ত ওলামায়ে দেওবন্দ নিঃসংকোচে করে যাচ্ছে। এমনকি বাংলাদেশের কওমী মাদ্রাসার অনেক মাদ্রাসার পাঠ্য সূচিতে অন্তভূক্ত করা হয় “মওদূদির ভ্রান্ত আকিদা” নামক সাব্জেক্ট।
অন্ধ বিরোধিতার প্রথম দৃষ্ঠান্ত
ভাওয়াল পুরের এক ব্যক্তি দেওবন্দ মাদারাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কাসেন নানতুবীর লেখা ‘তাসফিয়াতুল আকায়ীদ’ বইয়ের কিছু অংশ লিখে লেখকের পরচিয় গোপণ রেখে দেওবন্দের মুফতী মাহাদী হোসাইনের নিকট পেশ করেনে এবং উক্ত লেখা নিয়ে তার মতামত জানাতে আহ্বান করেন। দেওবন্দের মুফতি উক্ত লেখাকে মাওলানা মওদূদির লেখা মনে করে লেখককে কাফের ফতোয়া দিয়ে ছিলেন। প্রশ্নকারী পরবর্তীতে মুফতি মাহাদী হোসাইনের দেওয়া ফতোয়া এবং কাসেন নানতুবীর (রহ।) লেখা বইয়ের পৃষ্ঠা নম্বর সহ সংবাদ পত্রে প্রকাশ করে দেয়। যার ফলে দেওবন্দ মাদরাসার আলিমদের মধ্যে গভীর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। পরবর্তীতে দেওবন্দ মাদরাসার তৎকালীন মুহতামিম কারী তাইয়েব সাহেবের অনুরোধে মুফতি মাহাদী হোসাইন তার ভুল স্বীকার করে ফতোয়া ফিরিয়ে নেয়।[2]১৯৫৬ সনের ‘দারুল উলুম দেওবন্দ’ নামক মাসিক পত্রিকার এপ্রিল সংখ্যার ১২নং … Continue reading
অন্ধ বিরোধিতার দ্বিতীয় দৃষ্ঠান্ত
ভাগলপুর জেলার আনিসুর রহমান নামক এক ব্যক্তি দেওবন্দ মাদারাসার মুহতামিম কারী তাইয়েব (রহ.) লেখা একটি গ্রন্থের কিছু অংশ মুফতী মাহাদী হাসানের নিকট পাঠায়। মুফতী মাহাদী হাসান উক্ত লেখা মাওলানা মওদূদীর মনে করে ফতোয়া দেয়, ‘প্রশ্নের ভেতর যে উদ্ধতি দেওয়া হয়েছে তার লেখক কুরাআনের আয়াত পরিবর্তন সাধন করেছে। বরং ভেতরে ভেতরে সে কুরআনকে অস্বীকার করেছে। সুতরাং উক্ত ব্যক্তি মুলহীদ ও বেদীন। সে খ্রিষ্ঠান ও কাদিয়ানী মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত।’ প্রশ্নকারী মুফতী মাহাদী হোসাইনের দেওয়া ফতোয়া এবং কারী তাইয়েব (রহ.) এর নাম সহ ‘দাওয়াত’ নামক একটি পত্রিকায় ছাপিয়ে দেয়। পরবর্তীতে চাপে পরে মুফতী সাহেব তার ভুল স্বীকার করে ফতোয়া তুলে নেয়।[3]‘দাওয়া পত্রিকা’, ১৯৬২ সনের ২২ ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত।
References
মাশা-আল্লাহ। অনেক তথ্যবহুল আলোচনা
তথ্যবহুল আলোচনা