Insight Zone

পৃথিবী আগে সৃষ্টি নাকি মহাকাশ?

পৃথিবী আগে সৃষ্টি নাকি মহাকাশ?

পৃথিবী আগে সৃষ্টি নাকি মহাকাশ?

পবিত্র কুরআনের কিছু আয়াতের ভুল ব্যাক্ষা করে মুক্তমণা নাস্তিকরা তাদের ভিবিন্ন সাইটে লিখেছে কুরআন অনুযায়ী আল্লাহ আগে পৃথিবী সৃষ্টি করেছে তারপর মহাকাশ সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান মতে, বিগ ব্যাং এর পরে পুরো মহাবিশ্ব ধোঁয়া’র মতো ছিলো। এরপর সেই ধোঁয়া থেকে নক্ষত্র তৈরি হয়, এবং সর্বশেষ পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। অতএব, কুরআনের সাথে বিজ্ঞানের সাংঘর্ষিকতা আছে।

কোনটি আগে সৃষ্টি করা হয়েছে, আকাশ নাকি পৃথিবী?

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে একটি বিষয় স্পষ্ট করার প্রয়োজন। কুরআন কোনো বিজ্ঞানের বই নয়। আর কুরআনকে বিজ্ঞান দিয়ে জাস্টিফাই করাও যাবেনা। বিজ্ঞান সত্য বা নিশ্চিত জ্ঞান দিতে সক্ষম নয়। বিজ্ঞানের থিওরী পরিবর্তনশীল কিন্তু কুরআনের একটি আয়াতও কেয়ামত পর্যন্ত পরিবর্তন হবেনা।

বল, ‘তোমরা কি তাঁকে অস্বীকার করবে যিনি দু’দিনে যমীন সৃষ্টি করেছেন? আর তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ বানাতে চাচ্ছ? তিনিই সৃষ্টিকুলের রব’। 1

তার বুকে তিনি সৃদৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, যমীনকে বরকতমন্ডিত করেছেন আর তাতে প্রার্থীদের প্রয়োজন মুতাবেক নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য সঞ্চিত করেছেন চার দিনে। 2

অতঃপর নজর দিয়েছেন আকাশের দিকে যখন তা ছিল ধোঁয়া (’র মত)। তখন তিনি আকাশ আর পৃথিবীকে বললেন- আমার অনুগত হও, ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। উভয়ে বলল- আমরা স্বেচ্ছায় অনুগত হলাম। 3

অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দুই দিনে সপ্তাকাশে পরিণত করলেন এবং প্রত্যেক আকাশে উহার বিধান ব্যক্ত করলেন এবং আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করলাম প্রদীপমালা দ্বারা এবং করলাম সুরক্ষিত। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা। 4

পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তিনি আকাশের প্রতি মনঃসংযোগ করেন, অতঃপর সপ্ত আকাশ সুবিন্যস্ত করেন এবং তিনি সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী। 5

তোমাদের সৃষ্টি বেশি কঠিন না আকাশের? তিনি তো সেটা সৃষ্টি করেছেন। 6

পবিত্র কুরআনের এই আয়াত সমূহের অনুবাদ পড়ে যে কারো মনে হতে পারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কিছু জায়গায় বলেছে, তিনি পৃথিবীর সৃষ্টির পূর্বে আকাশ সৃষ্টি করেছেন। আবার, কিছু জায়গায় বলেছে, আকাশের সৃষ্টির পূর্বে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং এখানে কুরআনের আয়াতের মধ্যেও সাংঘর্ষিকতা পাওয়া যাচ্ছে। (নাউজুবিল্লাহ) এছাড়া, নাস্তিক ও মুক্তমণারা এই আয়াত সমূহকে উপস্থাপন করে দাবি করে থাকেন যে, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন। এরপর, তিনি আসমান সৃষ্টি করছেন।

কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান মতে, বিগ ব্যাং এর পরে পুরো মহাবিশ্ব ধোঁয়া’র মতো ছিলো। এরপর সেই ধোঁয়া থেকে নক্ষত্র তৈরি হয়, এবং সর্বশেষ পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। অতএব, বিজ্ঞানের আলোকে কুরআন ভুল প্রমাণিত। (নাউজুবিল্লাহ)

উক্ত আয়াত সমূহে ( সূরা বাকারা এবং ফুসসিলাতে ) ব্যবহৃত ثُمَّ শব্দের অর্থ শুধু মাত্র সৃষ্টির ধারাবাহিক কোনো ক্রম নির্দেশ করে না। অর্থাৎ, আল্লাহ প্রথমে আসমান সৃষ্টি করেছেন, তারপর জমিন সৃষ্টি করেছেন এরকম কোনো ক্রম নির্দেশ করেনি। সূরা বাকারা এবং ফুসসিলাতে ব্যাবহৃত ثُمَّ শব্দটির অর্থ; অতঃপর, তাছাড়া , উপরন্তু। আরবি শব্দ ثُمَّ দ্বারা কখনো কখনো ধারাবিকতা বুঝানো হয়। আবার কখনো কখনো বুঝানো হয়না। একই সম্পর্ক যুক্ত তথ্যের মধ্যে দূরত্ব বোঝানোর জন্যও ثُمَّ শব্দটি ব্যাবহৃত হয়। 7

যেমন; এই সেমিস্টারে তোমার রেজাল্ট দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি, তাছাড়া ( ثُمَّ ) তুমি গত সেমিস্টারে যে ফলাফল করেছিলে তা আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারিনি। তাহলে এই বাক্যে ‘তাছাড়া’ (ثُمَّ) শব্দ দিয়ে দুটি ঘটনার ক্রম বুঝানো হয়নি। বরং পরের ঘটনাটি ক্রমানুসারে আগে ঘটলেও পরে উল্লেখ হয়েছে।

*

هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ لَکُمۡ مَّا فِی الۡاَرۡضِ جَمِیۡعًا ٭ ثُمَّ اسۡتَوٰۤی اِلَی السَّمَآءِ فَسَوّٰىهُنَّ سَبۡعَ سَمٰوٰتٍ ؕ وَ هُوَ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ ﴿۲۹﴾

“পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন; অতঃপর তিনি আকাশের প্রতি মনঃসংযোগ করেন, অতঃপর সপ্ত আকাশ সুবিন্যস্ত করেন এবং তিনি সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী। 5

সূরা বাকারাহ’র এই আয়াতে, পৃথিবী সৃষ্টির পর জমিন সৃষ্টি করা হয়েছে এ-কথা বুঝানো হয়নি। বরং জমিন সৃষ্টির পর তিনি(আল্লাহ) আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন,তারপর সপ্ত আকাশ সুবিন্যাস্ত করেন।

সৃষ্টি শব্দটির জন্য আরবিতে خَلَقَ 8 শব্দটি ব্যাবহার করা হয়। اسۡتَوٰۤی 9 শব্দের অর্থ হচ্ছে সুবিন্যস্ত / মনোনিবেশ করা। فَسَوّٰ 10 শব্দের অর্থও সুবিন্যাস্ত করা।

যেমনঃ সূরা আল-ক্বিয়ামাহ’র ৩৮ নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা উল্লেখ করেন,

ثُمَّ کَانَ عَلَقَۃً فَخَلَقَ فَسَوّٰی তারপর সে হল রক্তপিন্ড, অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করলেন ও সুবিন্যস্ত করলেন। 11

এখানে فَسَوّٰی শব্দ দিয়ে সুবিন্যস্ত করা বুঝানো হয়ছে, এবং اسۡتَوٰۤی মনোনিবেশ করা বুঝানো হয়েছে। فَسَوّٰی এবং اسۡتَوٰۤی শব্দের অর্থ হচ্ছে সুবিন্যস্ত করা। শব্দ দুটির উৎপত্তি س و ي থেকে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এই (বাকারা;২৯) আয়াতে আকাশ সৃষ্টি করেছেন তা বুঝায়নি, বরং তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং সপ্ত আকাশ সুবিন্যাস্ত করেন। অর্থাৎ, আকাশ আগে থেকেই ছিলে, অতপর তাকে সপ্ত আকাশে সুবিন্যাস্ত করেন। সুবিন্যাস্ত করা আর সৃষ্টি করা এক জিনিস নয়।

*

قُلۡ اَئِنَّکُمۡ لَتَکۡفُرُوۡنَ بِالَّذِیۡ خَلَقَ الۡاَرۡضَ فِیۡ یَوۡمَیۡنِ وَ تَجۡعَلُوۡنَ لَهٗۤ اَنۡدَادًا ؕ ذٰلِکَ رَبُّ الۡعٰلَمِیۡنَ

বল, ‘তোমরা কি তাঁকে অস্বীকার করবে যিনি দু’দিনে যমীন সৃষ্টি করেছেন? আর তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ বানাতে চাচ্ছ? তিনিই সৃষ্টিকুলের রব’। 12

সূরা ফুসসিলাতের ৯ নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সৃষ্টি শব্দটির জন্য خَلَقَ শব্দটি ব্যাবহার করেছেন। আরবিতে সৃষ্টি শব্দের জন্য خَلَقَ শব্দটি ব্যাবহার করা হয়। এবং ১১নং আয়াতে,

ثُمَّ اسۡتَوٰۤی اِلَی السَّمَآءِ وَ هِیَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَ لِلۡاَرۡضِ ائۡتِیَا طَوۡعًا اَوۡ کَرۡهًا ؕ قَالَتَاۤ اَتَیۡنَا طَآئِعِیۡنَ

তারপর নজর দিয়েছেন আকাশের দিকে যখন তা ছিল ধোঁয়া (’র মত)। তখন তিনি আকাশ আর পৃথিবীকে বললেন- আমার অনুগত হও, ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। উভয়ে বলল- আমরা স্বেচ্ছায় অনুগত হলাম। 3

এই আয়াতে আল্লাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ثُمَّ (অতঃপর) শব্দ দিয়ে ক্রম নির্দেশ করেছে। তবে ثُمَّ শব্দের পর خَلَقَ শব্দটি ব্যাবহার না করে اسۡتَوٰۤی শব্দটি ব্যাবহার করেছেন। خَلَقَ শব্দের অর্থ সৃষ্টিকরা। অর্থাৎ কোনো কিছু অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে নিয়ে আসা। اسۡتَوٰۤی শব্দের অর্থ বিন্যাস্ত করা / মনোনিবেশ করা। অর্থাৎ, কোনো কিছু আগে থকেই ছিলো এবং সেটা নতুন রুপ দেওয়া বা দেওয়ার জন্য মনোনিবেশ করা। সুতরাং, আল্লাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ১১ ও ১২ নং আয়াতে বোঝাতে চেয়েছেন যে, আল্লাহ যমিন সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন এবং একে সপ্ত আকাশে বিন্যাস্ত করেন। এখানে কোনো অবস্থায় এটা বুঝানো হয়নি যে তিনি (আল্লাহ) আগে যমিন সৃষ্টি করেছেন, তারপর আসমান সৃষ্টি করেছেন।

কুরআন অনুযায়ী পৃথিবী আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি নয়। কেননা, সূরা আন নাযিয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা, ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি পৃথিবীর আগে আসমান সৃষ্টি করছেন।

ءَاَنۡتُمۡ اَشَدُّ خَلۡقًا اَمِ السَّمَآءُ ؕ بَنٰهَا

তোমাদের সৃষ্টি বেশি কঠিন না আকাশের?

رَفَعَ سَمۡکَهَا فَسَوّٰىهَا

তিনি তো সেটা সৃষ্টি করেছেন। তার ছাদ অনেক উচ্চে তুলেছেন, অতঃপর তাকে ভারসাম্যপূর্ণ করেছেন।

وَ اَغۡطَشَ لَیۡلَهَا وَ اَخۡرَجَ ضُحٰهَا

আর তিনি এর রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন এবং এর দিবালোক প্রকাশ করেছেন।

وَ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ ذٰلِکَ دَحٰىهَا 

অতঃপর তিনি যমীনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।

اَخۡرَجَ مِنۡهَا مَآءَهَا وَ مَرۡعٰهَا

তিনি তার ভিতর থেকে বের করেছেন তার পানি ও তার তৃণভূমি।

وَ الۡجِبَالَ اَرۡسٰهَا

আর পর্বতগুলোকে তিনি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। 13

এখানে ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ‘তাছাড়া’ ( ثُمَّ ) শব্দটি ব্যাবহার না করে, ‘অতঃপর ‘ ( بَعۡدَ ذٰلِکَ )14 শব্দটি ব্যাবহার করে ক্রম বুঝিয়েছেন।

*

সূরা ফুসসিলাতে উল্লেখিত আয়াত সমূহে উল্লেখিত সময়ের হিসেব করলে মোট দিনের সংখ্যা হয় আট। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কুরআনে কমপক্ষে সাত স্থানে ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টির কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ সুবাহানুওয়া তায়ালা অবশ্যই ছয় আর আটের পার্থক্য জানেন। সুতরাং উল্লেখিত আয়াত সমূহে আল্লাহর পৃথিবী সৃষ্টির কোনো ক্রম নির্দেশ করেনি।

পৃথিবী সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ৬ টি পর্যায়ের কথা ভিবিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন। যেমন, সূরা আল আরাফ-৫৪, সূরা ইউনুস-৩, সূরা হুদ-৭, সূরা আল ফুরকান-৫৯, সাজদাহ-৪, ক্বাফ-৩৮ এবং হাদিদ-৪ এই সাতটি স্থানে ছয় দিনে পৃথিবী সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা, যতবারই মহাবিশ্ব সৃষ্টির কথা এনেছেন প্রতিবারই জমিন ( اَرۡضَ ) শব্দের আগে আসমান ( لسَّمَآ ) শব্দটি এসেছে।

রেফারেন্স
  1. (41:9) Fussilat | (৪১:৯) হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)-অনুবাদ/তাফসীর[]
  2. (41:10) Fussilat | (৪১:১০) হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)-অনুবাদ/তাফসীর []
  3. (41:11) Fussilat | (৪১:১১) হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)-অনুবাদ/তাফসীর [][]
  4. (41:12) Fussilat | (৪১:১২) হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)-অনুবাদ/তাফসীর []
  5. (2:29) Al-Baqara | (২:২৯) আল-বাকারা-অনুবাদ/তাফসীর [][]
  6. (79:27) An-Nazi’at | (৭৯:২৭) আন-নাযি’আত-অনুবাদ/তাফসীর []
  7.  The Quranic Arabic Corpus – Word by Word Grammar, Syntax and Morphology of the Holy Quran[/ref] [ref]The Quranic Arabic Corpus – Word by Word Grammar, Syntax and Morphology of the Holy Quran []
  8. The Quranic Arabic Corpus – Word by Word Grammar, Syntax and Morphology of the Holy Quran []
  9. The Quranic Arabic Corpus – Word by Word Grammar, Syntax and Morphology of the Holy Quran []
  10. The Quranic Arabic Corpus – Word by Word Grammar, Syntax and Morphology of the Holy Quran []
  11. (75:38) Al-Qiyama | (৭৫:৩৮) আল-ক্বিয়ামাহ-অনুবাদ/তাফসীর []
  12. (41:9) Fussilat | (৪১:৯) হা-মীম আস-সাজদা (ফুসসিলাত)-অনুবাদ/তাফসীর []
  13. আন-নাযি’আত; ৭৯ঃ২৭-৩২ []
  14. The Quranic Arabic Corpus – Word by Word Grammar, Syntax and Morphology of the Holy Quran []
0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Scroll to Top
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x