বাধ্যতামূলক হিজাব পরিধান আইন কি শোষণ?
নানান ব্যস্ততায় অনেকদিন গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়না সাদিদের। ধুলো ধূসর ইট পাথরের যান্ত্রিক কোলাহলে ভরা এই শহরের ব্যাস্ত মানুষদের সাথে মিশতে গিয়ে কবে যে সাদিদ খুবই ব্যাস্ত একজন মানুষ হয়ে গেল তা বুঝে উঠার কূল পায় না সে নিজেই! এভার লকডাউনে বাড়ি যাওয়ার দূর্দান্ত একটা সুযোগ কড়া নাড়ছে তার দরজায়! সপ্তাহখানেকের জন্য টিউশন থেকে ছুটি নিলো! সকালে ফজরের নামাজ পড়েই রওনা দিলো সে। দীর্ঘদিন পর গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে।
ভোরের অবিচ্ছিন্ন নীরবতায় গাড়িতে বসে বসে সাদিদের মনে পড়ে গেল গ্রামের স্মৃতিকাতর সেই মূহুর্তগুলো। সে দিনগুলো হৃদয়ের গভীরে ঘুমিয়ে আছে বহুকাল, চলার পথের অনেক স্মৃতির ভাঁজে ভাঁজে আজও অমলিন হয়ে আছে । গ্রামের মেটো পথে বাধাহীণ ছুটে বেড়ানো দিনগুলোতে মিশে আছে কত স্মৃতি। কানামাছি কিংবা লুকোচুরি, ঘড়ির দিকে না তাকিয়ে ইচ্ছে মতো স্কুল মাঠে ফুটবল খেলা, ঘন্টার পর ঘন্টা পুকুরে সাঁতার কাটা, এমন হাজারো স্মৃতি সাদিদকে এক মূহুর্তেই স্মৃতিবিধুরতা করে দেয়!
শৈশবের এমন স্মৃতিকাতর মূহুর্তগুলো কল্পনা করতে করতে বাড়িতে পৌছালো সাদিদ। বাড়িতে সাদিদের সব চেয়ে কাছে বন্ধু অনিক।
অনিক ইদানিং ফেইসবুকে ভিবিন্ন নাস্তিকদের ভিডিও দেখে প্রভাবিত হয়ছে। নিজেকে একজন নাস্তিক হিসেবে পরিচয় দিতেই সে বেশ সাচ্ছন্দ বোধ করে।
সাদিদ একজন প্রাক্টিসিং মুসলিম আর অনিক পুরোধমে নাস্তিক। দুজনে মধ্যে প্রায়ই ভিবিন্ন বিষয়ে তুমুল বিতর্ক হয়।
সেবার বিতর্কটা ছিলো হিজাব নিয়ে!
কিছু মুসলিম দেশে হিজাব পড়া বাধ্যতামূলক করায় অনিক ভিবিন্ন ভাবে আপত্তি জানায়!
অনিকঃ হিজাব বাধ্যতামূলক করাটা শোষণ মূলক বিধান। ইসলাম ধর্ম মানুষকে শোষণ করে। মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন করে।
সাদিদঃ আচ্ছা অনিক বলতো “হিজাব বাধ্যতামূলক করাটা কেন শোষণমূলক ?
অনিকঃ এই বিধানের কারণে নারীরা তাদের ইচ্ছে মতো পোশাক পরিধান করতে পারবেনা! এটা কি শোষণমূলক বিধান নয় ? ইসলাম কি জগন্য যে একজন নারী তার পছন্দ মতো পোশাক পড়ার স্বাধীনতাটুকু পর্যন্ত পাচ্ছেনা।
সাদিদঃ হা, হা…
আচ্ছা অনিক বলতো, পৃথিবীর কোন দেশে সীমাহীন স্বাধীনতা আছে ?
অনিকঃ পশ্চিমা দেশগুলোতে আছে!
সাদিদঃ ও আচ্ছা তাই নাকি ? আচ্ছা পশ্চিমা দেশগুলোতে কি আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবো? চাইলে কি উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় চলাফেরা করতে পারবো? চাইলে কি চুরি করতে পারবো ?
অনিকঃ না, তা কিছুতেই করা যাবেনা!
সাদিদঃ আচ্ছা তাহলে কি তারা আমার স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করতেছে না ? আমি চাচ্ছি নগ্ন হয়ে রাস্তায় ঘুরবো, কিন্তু তারা আমাকে নগ্নতা ডাকার জন্য বাধ্য করতেছে!
ইসলামী দেশে হিজাব বাধ্যতা মূলক করাটা যদি শোষণ হয়ে থাকে তাহলে পশ্চিমা দেশে indecent exposure laws[1] প্রণোয়ন করে তারাও আমার অধিকার খুন্ন করছে।
অনিকঃ কিন্তু সেটা তো সে দেশের আইন! তাই সেখানে সেই আইন মানতে বাধ্য!
সাদিদঃ পশ্চিমারা করলে আইন আর ইসলামি রাষ্ট্র করলে শোষণ? খুবই হাস্যকরনা বিষয়টা !
দেখ আমরা কেউ কখনো স্বাধীন হতে পারিনা! কোনো না কোনো আইনে ভেতরে আমদের থাকতে হবে! একজন লোক চাইলেই হাইওয়ে রোডে গাড়ি চালাতে পারবেনা! সরকার কর্তিক আইন করা আছে গাড়ি চালাতে হলে ড্রাইবিং লাইসেন্স লাগবে। তাহলে যারা গাড়ি চালাতে যানেনা তারা যদি বলে সরকার আমাদের অধিকার ক্ষুন্ন করছে, আমাদের স্বাধীনতা দিচ্ছেনা! তাহলে বিষয়টা খুবই হাস্যকর হবে না?
অনিকঃ হুম…..
সাদিদঃ শুধু তাই নয়, পশ্চিমা দেশগুলো যখন আইন করে হিজাব নিষিদ্ধ করে দেয় তখন সেক্যুলারদের মুখে কুলুপ এঁটে যায় কেন?
তখন কি কারো অধিকার ক্ষুন্ন হয় না? নাকি অধিকার শুধু পশ্চিমাদের জন্য? এটাই কি পশ্চিমাদের মানবতা?
ফ্রান্সে যে মুসলিম বিদ্বেষের জেরে স্কুলে হিজাব পরা নিষিদ্ধ! রেফারেন্স-২
শুধু কি ফ্রান্স! নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়া ও বুলগেরিয়া সহ ইউরোপের অনেক দেশেই প্রকাশ্যস্থানে মুখ-ঢাকা পোশাক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। রেফারেন্সঃ-৩
তখন কি মুসলিমদের উপর শোষণ করা হচ্ছে এমনটা মনে হয়নি মুক্তমণা নাস্তিকদের?
অনিকঃ হুম বুঝতে পেরেছি ভাই!
অনিকের আত্মসমার্পনে বিতর্কের শেষ হলে এখানে!
তথ্য সূত্রঃ
1.Indecent exposure Definition & Meaning – Merriam-Webster
2.ইতিহাসের সাক্ষী: ফ্রান্সে যে মুসলিম বিদ্বেষের জেরে স্কুলে হিজাব পরা নিষিদ্ধ হয়েছিল – BBC News বাংলা
3. মুসলিমদের বোরকা-নিকাব পরা নিষিদ্ধের পক্ষে রায় সুইৎজারল্যান্ডের গণভোটে – BBC News বাংলা