হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও আয়েশা (রাঃ) এর বিয়ে নিয়ে সকল অভিযোগের জবাব
ইসলাম বিদ্ধেষ ছড়ানোর জন্য ইসলামের উপর অমুসলিমরা যে সকল মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও আয়েশা (রাঃ) এর বিয়ে। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যখন আয়েশা (রাঃ) কে বিয়ে করেন তখন আয়েশা (রাঃ)’র বয়স ছিলো ৬/৭ এবং যখন ঘরে তুলে নিয়ে যায় তখন বয়স ছিলো ৯ বছর। ৬ কিংবা ৯ সংখ্যাগুলো যেমন খুবই ছোট তেমনি একজন মানুষের বয়সের ক্ষেত্রেও ছোট! তাই অমুসলিমদের অভিযোগ হলো, একজন নবী কি করে ৬ বছর বয়সী একজন শিশুকে বিয়ে করতে পারে! ৬ বছরের একটা শিশুকে বিয়ে করা নারীলোভী বা শিশুকামীতার সামিল! (নাউজুবিল্লাহ) বর্তমান সময়ে ৬ বছরের কোনো মেয়ের সম্মতি আইনগতভাবে গ্রহণ করা হয় না এবং ৬ বছর বয়সের কোনো মেয়ে শারিরীক সম্পর্ক করার জন্য সক্ষম নয়। তাই মুহাম্মদ (সাঃ) আয়েশা (রাঃ) কে বিয়ে করাটা ছিলো ধর্ষণের সামিল! (নাউজুবিল্লাহ) অনলাইন কিংবা অফলাইন উভয় ক্ষেত্রে নাস্তিকদের খুবই জনপ্রিয় একটি অভিযোগ এটি। অথচ, মক্কার জাহেলরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পাগল, যাদুকর বলে অপবাদ দিয়েছিলো। কিন্তু কখনো নারীলোভী বা শিশুকামী, ধর্ষক, বলে গালি দেয়নি! মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর যারা এহেন মিথ্যাচার করে তাদের উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হোক।
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ৭ বছর বয়সে বিয়ে করেন, যখন তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে দেয়া হয় তখন তার বয়স ছিল নয় বছর, তাঁর সাথে খেলনা ছিল। আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন ইন্তেকাল করেন, তখন তাঁর বয়স ১৮ বছর। 1
আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ছয় অথবা সাত বছর বয়সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিয়ে করেন। আমরা মদীনায় আগমন করলে একদল মহিলা আসলেন। বর্ণনাকারী বিশরের বর্ণনায় রয়েছেঃ আমার নিকট (আমার মা) উম্মু রূমান (রাঃ) আসলেন, তখন আমি দোলনায় দোল খাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন, আমাকে প্রস্তুত করলেন এবং পোশাক পরিয়ে সাজালেন। অতঃপর আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পেশ করা হলো। তিনি আমার সঙ্গে বাসর যাপন করলেন, তখন অমার বয়স নয় বছর। মা আমাকে ঘরের দরজায় দাঁড় করালেন এবং আমি উচ্চহাসি দিলাম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ আমার মাসিক ঋতু হয়েছে। আমাকে একটি ঘরে প্রবেশ করানো হলো। তাতে আনসার গোত্রের একদল মহিলা উপস্থিত ছিলেন। তারা আমার জন্য কল্যাণ ও বরকত কামনা করলেন। 2
বিবাহযোগ্য বয়স বা প্রাপ্তবয়স্ক বয়স কিভাবে নির্ধারণ করা হয়?
সাধারণত বয়ঃসন্ধিক (Puberty) বৈশিষ্টসমূহকে বিয়ের বয়সের চিহ্ন হিসেবে গণ্য করা হয়। মেয়েদের জন্য এই বৈশিষ্ট ছিল ঋতুস্রাব বা মাসিকের সূচনা এবং ছেলেদের জন্য বয়ঃসন্ধিক চুল বা যৌনকেশ। অস্ট্রেলিয়ান সরকারের স্বাস্থ্য ও বয়স্ক পরিচর্যা বিভাগ এর তথ্য অনুযায়ী,বয়ঃসন্ধি বলতে বুঝানো হয়, যখন আপনি শৈশব থেকে যৌবনে যেতে শুরু করেন। বয়ঃসন্ধির সময়, আপনার শরীর হরমোন তৈরি করে যা শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন ঘটায়। প্রজনন সিস্টেম এবং অন্যান্য শরীরের সিস্টেম পরিপক্ক হয়, এবং শরীরের বিকাশ হয় যার ফলে শারীরিকভাবে একটি শিশুর জন্ম দিতে সক্ষমতা অর্জন করে। মহিলাদের বয়ঃসন্ধিকাল সাধারণত ৮ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে শুরু হয়। এটি কয়েক বছর ধরে চলতে পারে। বয়ঃসন্ধি বিভিন্ন মানুষের জন্য বিভিন্ন সময়ে ঘটে। এই পরিবর্তনগুলি কিছু লোকের জন্য দ্রুত এবং অন্যদের জন্য ধীরে ধীরে ঘটতে পারে। আপনার শরীরের জন্য সঠিক সময়ে আপনার বয়ঃসন্ধি শুরু হবে। এটি আপনার বন্ধু বা আপনার পরিবারের অন্যান্য মহিলাদের থেকে আলাদা হতে পারে। 3
নারীর Puberty বা মাসিকের সময় জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণ, বিশেষ করে পুষ্টির কারণ দ্বারা প্রভাবিত হয়। 4
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ)গুলির মধ্যে একটি Eunice Kennedy Shriver National Institute of Child Health and Human Development (NICHD), এর দেওয়া তথ্য মতে, বয়ঃসন্ধির সূচনা, এটা জীবনেরর সময় যখন একজন ব্যক্তি যৌনভাবে পরিপক্ক হয়, সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১৩ বছর বয়সে এবং ছেলেদের জন্য ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সের মধ্যে ঘটে। অকাল বয়ঃসন্ধি হল বয়ঃসন্ধি যা অস্বাভাবিকভাবে তাড়াতাড়ি শুরু হয় এবং বিলম্বিত বয়ঃসন্ধি হল বয়ঃসন্ধি যা অস্বাভাবিকভাবে দেরিতে শুরু হয়। 5
Mayoclinic এর দেওয়া তথ্য মতে, অকাল বয়ঃসন্ধি হল যখন শিশুদের শরীর খুব তাড়াতাড়ি প্রাপ্তবয়স্কদের দেহে পরিবর্তিত হতে শুরু করে। এই পরিবর্তন বয়ঃসন্ধি নামে পরিচিত। বেশিরভাগ সময়, বয়ঃসন্ধি ঘটে মেয়েদের ৮ বছর বয়সের পরে এবং ছেলেদের মধ্যে ৯ বছর বয়সের পরে। 6
সাধারণত মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল ৮-৯ বছর থেকে শুরু হলেও, অনেক সময় ৬ বছর বয়সেও মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হতে পারে। 7
আমেরিকান জাতীয় স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান প্রতিবেদন এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মাসিকের গড় বয়স নির্ভুলভাবে অনুমান করা খুবই কঠিন, এবং এটি ভৌগলিক অঞ্চল, জাতি, জাতি এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয় এবং এটি বেশিরভাগ সময় 8 থেকে 16 বছর বয়সের মধ্যে ঘটে। পশ্চিমে ৯-১৪ বছর বয়সের মধ্যে মাসিক হওয়া স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। 8
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে, কোনো মেয়ের যদি পিরিয়ড হয় বা বয়ঃসন্ধি কালে পৌঁছে যায় তখন সে সন্তান গর্ভধারনের জন্য সক্ষম হয়। আর স্থান-কাল-পাত্র বেদে পৃথিবীর একেক দেশে একেক সময়ে মেয়দের বয়ঃসন্ধীকাল শুরু হয়। তাই বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়স মূলত নির্ধারিত হয় তার শারিরীক সক্ষমতার উপরে। যদি কোনো মেয়ে ৯ বছর বয়সেই শারিরীকভাবে সক্ষমতা অর্জন করে তবে তার জন্য ৯ বছর বয়সই বিবাহের জন্য উপযুক্ত সময়। আবার কোনো মেয়ে যদি ২৫ বছর বয়সেও শারিরীক সক্ষমতা অর্জন না করে তবে ২৫ বছর বয়সেও সে বিবাহের জন্য উপযুক্ত বলে গণ্য হবে না।
পৃথিবীর সকল দেশেই কি একটি নির্দিষ্ট বিবাহযোগ্য বয়স রয়েছে?
আমরা জানি পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়ের জন্য বিয়ের একটা নির্ধারিত বয়স থাকে। মেয়েরা যখন বয়ঃসন্ধি কালে পৌঁছে যায় তখন সে সন্তান গর্ভধারনের সক্ষমতা অর্জন করে বা বিয়ের জন্য পরিপক্ক হয়। স্থান-কাল-পাত্র বেদে পৃথিবীতে একেক দেশে একেক সময়ে মেয়দের বয়ঃসন্ধীকাল শুরু হয়। তাই বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়েদের বয়স মূলত নির্ধারিত হয় তার শারিরীক সক্ষমতার উপরে। এই কারণে পৃথিবীর সকল দেশে কোনো নির্দিষ্ট করে নির্ধারিত বয়স নেই যেমন, বাংলাদেশে মেয়েরদের জন্য ১৮ এবং ছেলেদের ২১ বছর বৈধ হলেও, চীনে এই বয়সটি আবার অবৈধ। কারণ, চীনে বৈধ বিয়ের বয়স পুরুষের জন্য ২২ বা তার বেশি এবং মহিলাদের জন্য ২০ বা তার বেশি। 9 এভাবে পৃথিবীর অনেক দেশের আইনের সাথে আরেক দেশের আইনের মিল থাকে না। এটা স্বাভাবিক একটি বিষয়। এই কারণে পৃথিবীর সকল দেশের Age of Consent এবং Age of Marriage এক নয়।
Age of Consent হলো এমন একটি বয়স, যে বয়সে আইন অনুসারে কাউকে কারো সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে সম্মত হওয়ার জন্য যথেষ্ট বয়স্ক বলে মনে করা হয়। 10 বিবাহযোগ্য বয়স বা Age of Marriage হল একটি আইনী বয়স হিসাবে বা পিতামাতার, ধর্মীয় বা অন্যান্য ধরণের সামাজিক অনুমোদন সাপেক্ষে ন্যূনতম বয়স হিসাবে, যেখানে একজন ব্যক্তিকে বৈধভাবে বিবাহের অনুমতি দেওয়া হয়। 11
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এজেন্সি ফর ফান্ডামেন্টাল রাইটস এর দেওয়া তথ্য মতে, যেসকল দেশের Age of Consent ১৪ থেকে ১৫ বছর শ্রেণীভুক্ত দেশগুলি হল অস্ট্রিয়া, বুলগেরিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, জার্মানি, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, গ্রীস, ফ্রান্স, ক্রোয়েশিয়া, হাঙ্গেরি, ইতালি, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, রোমানিয়া, সুইডেন, স্লোভেনিয়া এবং স্লোভাকিয়া, এবং আরো ১৭ টি দেশ। ১৬-১৭ বছর শ্রেণীভুক্ত দেশগুলি হল, বেলজিয়াম, সাইপ্রাস, স্পেন, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লাক্সেমবার্গ, লাটভিয়া, নেদারল্যান্ডস এবং যুক্তরাজ্য, এবং আরো ১০ টি দেশ। ১৮ বছর শ্রেণীভুক্ত দেশ হলো ১টি। 12 ইউনিসেফের দেওয়া তথ্য মতে, লাতিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মেয়েদের প্রাথমিক যৌন দীক্ষার ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বোচ্চ হার রয়েছে। ২২ শতাংশের বেশি ১৫ বছর বয়সের আগে তাদের প্রথম যৌন মিলন করেছে। কিছু দেশে, হার ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। অঞ্চল জুড়ে যৌন সম্মতির জন্য সর্বনিম্ন বয়স ১৪ এবং ১৬ বছরের মধ্যে। তবুও কয়েকটি দেশে ১৪ বছরের কম বা ১৬ বছরের বেশি বয়স রয়েছে। 13 বর্তমান সময়ে Age of consent ১৪-১৬ হলেও পূর্বে তা এমন ছিলো না। যেমন আমেরিকায় ১৮৯৯ সালে কিছু আমেরিকান বিচারব্যবস্থায় যৌন সম্মতির বয়স ছিল ৯ বছর! 14 বর্তমানে যা ১৩-১৮ বছর (একেক অঞ্চলে একেক রকম)। আমরা যদি ইতিহাসে আরো পেছনে যেতে পারি তাহলে আরো কম বয়স লক্ষ্য করতে পারব। আবার যত সামনে এগুবো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে অনুমোদিত বয়সের সীমা ক্রমাগত বাড়ছে।
একটি বৈধ বিয়ের জন্য ইউরোপের দেশগুলোর নির্ধারিত বয়স ১৫-১৬ বছর শ্রেণীভুক্ত দেশগুলি হল অস্ট্রিয়া, বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, এস্তোনিয়া, স্পেন, ক্রোয়েশিয়া, হাঙ্গেরি, ইতালি, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, মাল্টা, পর্তুগাল, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, যুক্তরাজ্য, এবং আরো ১৬ টি দেশ। পোল্যান্ডে বৈধ বিয়ের নির্ধারিত বয়স ১৬ বছর। শ্রেণীভুক্ত টি শ্রেণীগত মান সহ দেশগুলি, কিন্তু শুধুমাত্র মহিলারা পোল্যান্ড। জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস এবং সুইডেন সহ আরো ৪টি দেশে বিয়ের বৈধ বয়স ১৮ বছর। বিয়ের ক্ষেত্রে কোনো নির্ধারিত বয়স নেই এমন দেশসমূহ হলো, বেলজিয়াম, গ্রীস, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, লুক্সেমবার্গ, স্লোভেনিয়া,এবং আরো ৭টি দেশ। 15 অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, বিবাহের বয়স প্রতিটি রাজ্য এবং অঞ্চল দ্বারা নির্ধারিত হয় সাধারণ আইন দ্বারা বা পৃথক বিধি দ্বারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন ব্যক্তি ১৮ বছর বয়সে পিতামাতার সম্মতি ছাড়াই বিয়ে করতে পারেন। তবে নেব্রাস্কা রাজ্য ছাড়া, সেখানে বিয়ের জন্য নির্ধারিত বৈধ বয়স ১৯ বছর। ওয়াশিংটন ডি সি তে বিয়ের জন্য নির্ধারিত বৈধ বয়স ১৬ বছর এবং মিসিসিপি রাজ্যে বিয়ের জন্য নির্ধাতির বৈধ বয়স ২১ বছর। 16
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতেই পারি যে, বিয়ে এবং যৌন সম্মতির জন্য নির্দিষ্ঠ একটি বৈধ বয়স নির্ধারিত নয়। একেক দেশে, একেক অঞ্চলে বৈধ বিয়ের জন্য নির্ধারিত বয়স একেক রকম।
নাস্তিকদের একটি ওয়েবসাইটে তারা দাবি করেছে যে, “বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানো এবং প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া ভিন্ন বিষয়। বয়ঃসন্ধি হচ্ছে প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার একটি ধাপ, যা আসলে প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া বোঝায় না। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানো মানেই ধরে নেয়া হয় সাবালিকা বা প্রাপ্তবয়ষ্ক হয়ে যাওয়া। যদিও আধুনিক বৈজ্ঞানিক ধ্যান ধারণা অনুসারে কথাটি সত্য নয়। বয়ঃসন্ধি হচ্ছে প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়ার লক্ষণের সুচনা। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হচ্ছেন একজন মানুষ যার তুলনামূলকভাবে পরিণত বয়স হয়েছে যা যৌন পরিপক্কতা ও পুনরূপাৎদনের ক্ষমতা অর্জনের সাথে জড়িত। একজন নারী বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছালেই সে সন্তান জন্ম দেয়ার পরিপক্কতা অর্জন করে না। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছাবার পরে তার শরীর সন্তান জন্মদানের উপযুক্ত হতে সবে শুরু করে। এই প্রক্রিয়া কারো কারো ক্ষেত্রে ৩ আবার কারো কারো ক্ষেত্রে ৫ বছরে পূর্ণতা পায়। কিন্তু ইসলামে মেয়েদের সাথে যৌনকাজের জন্য বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানোও জরুরি কিছু নয়। সেই বিষয়েই এই লেখাটি।”
নাস্তিকরা এই দাবির স্বপক্ষে (বয়ঃসন্ধি মানেই প্রাপ্তবয়স্ক না, বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছালেই সন্তান জন্ম দেওয়ার পরিপক্কতা অর্জন করে না, বয়সন্ধির পরেও ৩-৫ বছর লাগে পূর্ণতা পেতে, ইসলামে যৌন কাজের জন্য বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছানও জরুরি কিছু নয়) কোনো ধরণের প্রমাণাদি উপস্থাপন করেনি। অথচ আমরা সুস্পষ্টভাবে দেখিয়েছি যে, বয়ঃসন্ধিকালেই একজন মেয়ে গর্ভধারণ বা সন্তান পরিপক্কতা অর্জন করে।
একটি নির্দিষ্ট স্থান, কালের আইন দিয়ে কি অন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান, কালের আইনকে অবৈধ বলা যায়?
ধর্ষণের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো মানুষ যদি সে দেশের নির্ধারিত বৈধ বিয়ের বয়স হওয়ার পূর্বে কোনো মেয়েকে বিয়ে করে বা সহবাস করে তাহলে তা ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে। মুক্তমনা, নাস্তিকদের একটি যুক্তি হলো যেহেতু পৃথিবীতর অধিকাংশ দেশে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮/১৬ তাই, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যেহেতু ৯ বছর মেয়ের সাথে সংসার করেছে তাই তিনি একজন ধর্ষক! (নাউজুবিল্লাহ)
এখানে তাদের যুক্তিটি এমন যে, আমার দেশে মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ বছর। তাই পৃথিবীর অন্য যেসব দেশে বিয়ের জন্য নির্ধারিত বৈধ বয়স ১৮ এর কম, তাই সে দেশের সকল মানুষ ধর্ষক! এই দাবিটি একটি হাস্যকর দাবি বলে বিবেচিত হবে। কারণ, স্পেন, ক্রোয়েশিয়া, অস্ট্রিয়া সহ আরো অনেক দেশেই ১৬ বছর বয়সী মেয়ে এবং ছেলেদের বিচারিকের সম্মতিতে বিয়ে করা যেতে পারে। অন্যদিকে, জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস এবং সুইডেন সহ আরো অনেক দেশেই বিয়ের জন্য নির্ধারিত বয়স হয় ১৮ বছর। তাহলে কি জার্মানি, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস এবং সুইডেন সহ আরো অনেক দেশে বিয়ের জন্য নির্ধারিত বয়স ১৮ বছর হওয়ার কারণে, স্পেন, ক্রোয়েশিয়া, অস্ট্রিয়া সহ আরো যেসব দেশে বিয়ের জন্য নির্ধারিত বিয়ের বয়স ১৬ কিংবা আরো কম কম সেসব দেশের সব নাগরিকদের কি ধর্ষক বলে গণ্য করা হবে? শুধু তাই নয়, যুক্তরাজ্যে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে বিয়ের জন্য বৈধ বয়স নির্ধারণ করা হয় ১৮ বছর। 17 তাহলে কি ২০২৩ সালের পূর্বে যুক্তরাজ্যের সকল মানুষ ধর্ষক ছিলো আর এখন ২০২৩ সাল আসার পর সবাই এখন নিষ্পাপ হয়ে গিয়েছে? আবার, চিনে যেহেতু বিয়ের জন্য নির্ধারিত বয়স ২১ বছর, তাই যেসব দেশে বিয়ের বয়স ১৮ থাকার কারণে তাদের আইন অনুযায়ী ১৮ এর কম থাকা দেশের নাগরিকগণ যদি ধর্ষক হয়ে যায় তাহলে তো ১৮ বছর নির্ধারিত থাকা দেশের নাগরিকরাও চীন দেশের আইন অনুযায়ী ধর্ষক হয়ে যায়! শুধু তাই না! বর্তমানেও পৃথিবীর প্রায় সকল দেশ, এমনকি নাস্তিকদের স্বপ্নের দেশ ইউরোপ, আমেরিকা, এসব দেশের একটা ভিসা পাওয়ার লোভে যারা রাসুল (সাঃ) নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যাচারে লিপ্ত থাকে সারাদিন, সেখানেও মেয়েদের যৌন সম্মতির বয়স বা Age of Consent ১২-১৬ বছর। তাহলে নাস্তিকদের যুক্তি অনুযায়ী পৃথিবীর সকল মানুষই ধর্ষক! এমনকি নাস্তিক নিজেই একজন ধর্ষক!
মজার বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের এক মূর্খ নাস্তিক মুহাম্মদ (সাঃ) ধর্ষক প্রমাণ করতে গিয়ে নিজেই নিজেকে ধর্ষক বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে ফেইবুক লাইভে। সেই ধর্ষক নাস্তিকের নিজ মুখের স্বীকারোক্তিটি দেখে নিতে পারেন। Facebook
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতেই পারি যে, একেক দেশের আইন দিয়ে অন্য দেশকে জাজ করাটা হবে বোকামি! তাই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কত বছর বয়সের নারীকে বিয়ে করেছে, সেটা আমার দেশে বিবাহের আইনের সাথে যাচ্ছে না দেখে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ধর্ষক দাবি করাটা নির্বুদ্ধিতা ও গুণেধরা মস্তিষ্ক থেকে আসা চিন্তার ফল। বিয়ে এবং যৌন সম্মতির জন্য নির্দিষ্ঠ একটি বৈধ বয়স নির্ধারিত নয়। বরং, একেক দেশে, একেক অঞ্চলে, বৈধ বিয়ের জন্য নির্ধারিত বয়স একেক রকম।
ইসলামে বিবাহের মূলনীতি
ইসলামে উত্তম পদ্ধতিতে বিয়ের শর্ত ৪টি। ১. প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া ২. সহবাসের জন্য সক্ষম হতে হবে। ৩. বিয়ের জন্য মেয়ের সম্মতি থাকতে হবে। ৪. মেয়ের অভিবাবকের সম্মতি থাকতে হবে।
প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার স্বপক্ষে দলীলঃ
ইসলাম অনুযায়ী ছেলে বা মেয়েদের বিবাহযোগ্য বয়স হলো প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন,
আর তোমরা ইয়াতীমদেরকে পরীক্ষা কর যতক্ষণ না তারা বিবাহের বয়সে পৌঁছে। সুতরাং যদি তোমরা তাদের মধ্যে বিবেকের পরিপক্কতা দেখতে পাও, তবে তাদের ধন-সম্পদ তাদেরকে দিয়ে দাও। 18
সূরা নিসার ৬ নং আয়াতে বলা হয়েছে ইয়াতীমদের পরীক্ষা করতে যতক্ষণ না তারা বিবাহের বয়সে পৌঁছায়। এই আয়াত থেকেই প্রমাণ হয় যে বিবাহের জন্য একটা বয়স আছে। তবে এই বয়স কোনো সংখ্যার বয়স নয়। এটা হলো প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া বা শারীরীক, মানসিকভাবে সক্ষমতা অর্জন করা।
সূরা নিসার ৬নং আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে জালালাইনে বলা হয়েছে,
আর এতিমদেরকে পরীক্ষা কর বালেগ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত, তাদের ধর্মীয় এবং লেনদেনের বিষয়ে । অতঃপর বা বয়সের মাধ্যমে বিয়ের উপযুক্ত হয়ে যাবে। আর ইমাম শাফেয়ী (র.)-এর মতে, সেই বয়সটি হলো পনের বৎসর পরিপূর্ণ হওয়া। 19
ইসলামী ফাউন্ডেশন হতে প্রকাশতি তাফসীরে জালালাইনে বলা হয়েছে,
(যে পর্যন্ত না তাহারা বিবাহের বয়সে পৌছায়) অর্থাৎ, স্বপ্নদোষ বা বয়স হিসাবে উহার যোগ্য না হয় ততদিন (ইয়াতিমদিগের প্রতি লক্ষ্য রাখিবে)। অর্থাৎ, সাবালক হওয়ার পূর্বেই তাহাদের দ্বীনদারী এবং স্বীয় অবস্থা ও দায়িত্ব পরিচলানার বিষয়টি নিরীক্ষা করিবে। ইমাম শফিঈর অভিমত হইল, সাবালক হওয়ার বয়স হইল পনের বৎসর। 20
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআনে বলা হয়েছে,
আর তোমরা এতিমদের কে পরীক্ষা করে নাও, এপর্যন্ত যে, যখন তারা বিবাহে [-র বয়সে] পৌঁছে যায়, অনন্তর যদি তাদের মধ্যে কিয়ৎ পরিমাণ বুদ্ধিমত্তা দেখ, তবে তাদের ধন- সম্পত্তি তাদেরকে সমর্পণ করে দাও, আর ঐ : সমস্ত সম্পত্তি ভক্ষণ করো না অপব্যায়ে এবং তাড়াতাড়ি করে এই ধারণায় যে, তারা বালেগ হয়ে যাবে। 21
তাফসীরে আবু বকর যাকারিয়াতে বলা হয়েছে,
আয়াতে শিশুদের শিক্ষা-দীক্ষা ও যোগ্যতা যাচাই করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ বালেগ হওয়ার আগেই ছোট ছোট দায়িত্ব দিয়ে তাদের যোগ্যতা যাচাই করতে থাক, যে পর্যন্ত না তারা বিবাহের পর্যায়ে পৌছে অর্থাৎ বালেগ হয়।18
তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআনে বলা হয়েছে,
Once we know from verse 5 that minors should not be entrusted with properties until such time that their ability to discern and decide stands proved, the injunctions to educate and test such children to determine their ability follow in the next verse (6) Verse 6: وَابْتَلُوا الْيَتَامَىٰ حَتَّىٰ إِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ translated as ‘and test the orphans until they reach marriageable age;’ means that children, well before they become pubert and marriageable, should be tested through small assignments of buying and selling in order to determine their ability to conduct themselves in transactions on their own. This process of practical experimentation should continue right through upto the age of marriage-ability, that is, when they become pubert and mature. This is the time of special assessment. Now it should be determined if they have become smart and self-reliant in their affairs. Once this is sensed as ‘dependable’, it is time to hand over their property to them……………
In accordance with the other injunction, when children become mature, pubert and marriageable, the guardian should check up their state of growth at that stage in terms of experience, intelligence and dealings, and once it becomes clear that they understand their profit and loss and handle their affairs and dealings in a satisfactory manner, their property should be handed over to them. 22
এই আয়াতের ব্যখ্যায় তাফসীরে তাবারীতে বলা হয়েছে,
আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন- وَ ابۡتَلُوا الۡیَتٰمٰی حَتّٰۤی اِذَا بَلَغُوا النِّکَاحَ (তোমরা ইয়াতীমদেরকে যাচাই করবে, যে পর্যন্ত না তারা বিয়ের যোগ্য হয়।) …… ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, حَتّٰۤی اِذَا بَلَغُوا النِّکَاحَ এর ব্যখ্যায় বলেছেন যখন তাদের বিয়ের বয়স হয়। 23
তাফসীরে তাবারী, সূরা নিসা ৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
আল্লাহ্ তা’আলা অন্য আয়াতে ইরশাদ করেছেন- ইয়াতীমদেরকে যাচাই করতে থাকবে যে পর্যাপ্ত না তারা বিয়ে-যোগ্য হয় এবং তাদের মধ্যে ভাল-মন্দ বিচারের জ্ঞান দেখলে তাদের সম্পদ তাদেরকে ফিরিয়ে দেবে (৪ : ৬)। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা ইয়াতীমদের অভিভাবকগণকে আদেশ করেন, তারা যেন ইয়াতীমদের অর্থ-সম্পদ তাদের নিকট ফিরিয়ে দেয়, যখন তারা বিয়ের যোগ্য হয় এবং ভাল-মন্দ বিবেচনা করার মত জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন হয়। 24
এই আয়াতের ব্যখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসিরে বলা হয়েছে,
অতঃপর অল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ‘তোমরা পিতৃহীনদের দেখাশুনা কর যে পর্যন্ত না তারা যৌবনে পদার্পণ করে।’ এখানে- نِّکَاحَ, শব্দ দ্বারা প্রাপ্ত বয়স বুঝনো হয়েছে এবং প্রাপ্ত বয়সের পরিচয় তখনই পাওয়া যায় যখন এক বিশেষ প্রকারের স্বপ্ন দেখা যায় এবং এক বিশেষ প্রকারের পানি তীব্র বেগে বহির্গত হয় । * হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ ‘রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উক্তিটি ভালভাবেই স্মরণ আছেঃ ‘স্বপ্নদোষের পর পিতৃহীনতাও নেই এবং সারা দিনরাত নীরব থাকাও নেই।’ অন্য হাদীসে রয়েছেঃ ‘তিন প্রকারের লোক হতে কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। (১) শিশু, যে পর্যন্ত না সে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়। (২) ঘুমন্ত ব্যক্তি, যে পর্যন্ত না সে জেগে উঠে । (৩) পাগল ব্যক্তি, যে পর্যন্ত না তার জ্ঞান ফিরে আসে। সুতরাং প্রাপ্ত বয়সের নিদর্শন একতো হচ্ছে এই ।
দ্বিতীয় নিদর্শন কারও কারও মতে এই যে, যখন তার বয়স পনেরো বছর হবে। এর দলীল হচ্ছে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসটি, যাতে তিনি বলেনঃ ‘উহুদের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে সঙ্গে নেননি। তখন আমার বয়স ছিল চৌদ্দ বছর। খন্দকের যুদ্ধের সময় আমাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হাযির করা হলে তিনি সম্মতন হন ৷ সে সময় আমার বয়স ছিল পনেরো বছর।’ হযরত উমার ইবনে আবদুল আযীয (রঃ)-এর নিকট এ হাদীসটি পৌছলে তিনি বলেনঃ ‘প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়সের সীমা এটাই ।’
প্রাপ্ত বয়সের তৃতীয় নিদর্শন হচ্ছে নাভীর নীচে চুল গজান। এ ব্যাপারে আলেমদের তিনটি উক্তি রয়েছে। প্রথম উক্তি এই যে, এটা প্রাপ্ত বয়সের চিহ্ন! দ্বিতীয় উক্তি এই যে, মুসলমানদের মধ্যে এটা প্রাপ্ত বয়সের চিহ্ন নয় এবং তৃতীয় উক্তি এই যে, মুসলমানদের মধ্যে এটা প্রাপ্ত বয়সের চিহ্ন নয় কিন্তু যিম্মীদের মধ্যে এটা প্রাপ্ত বয়সের চিহ্ন। কেননা, এটা সম্ভাবনা রয়েছে যে, কোন ঔষধের কারণে এ চুল তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসে এবং যুবক হওয়া মাত্রই যিম্মীদের উপর জিযিয়া কর ধার্য করা হয়। তাহলে তারা ওটা ব্যবহার করতে লাগলো কেন? কিন্তু সঠিক কথা এই যে, সকলের পক্ষেই এটা প্রাপ্ত বয়সের চিহ্ন। কেননা, প্রথমতঃ এটা প্রকৃতিগত ব্যাপার। প্রতিষেধকের সম্ভাবনা খুব দূরের সম্ভাবনা । প্রকৃত কথা এই যে, এ চুল স্বীয় সময়মতই বের হয়ে থাকে । দ্বিতীয় দলীল হচ্ছে—মুসনাদ-ই-আহমাদের হাদীসটি, যাতে হযরত আতিয়া যারাযীর (রাঃ) বর্ণনা রয়েছে, তিনি বলেনঃ ‘বানূ কুরাইযার যুদ্ধের পর আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে হাযির করা হয়। তিনি নির্দেশ দেনঃ ‘এক ব্যক্তি দেখুক যে, বন্দীদের মধ্যে যাদের এ চুল বের হয়েছে তাদেরকে হত্যা করা হবে এবং যাদের বের হয়নি তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে।’ সে সময় আমার এ চুল বের হয়নি বলে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়।’ সুনান-ই-আরবাআর মধ্যেও এ হাদীসটি রয়েছে এবং ইমাম তিরিমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন। 25 ইসলামি আইন, ফতোয়া ও ফিকহ শাস্ত্র বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন গ্রন্থে বিবাহের বয়স নিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে,
সাবালকত্ব ও জ্ঞান-বুদ্ধির উন্মেষেই বিবাহের বয়স। সাবালকত্ব বা বালেগ বলতে বুঝানো হয়, পুরুষের ক্ষেত্রে স্বপ্নদোষ বা পনেরো বৎসর বয়স হওয়া। আর মহিলার ক্ষেত্রে ঋতুবতী বা গর্ভধারণক্ষম হওয়া, অথবা পনেরো বৎসর বয়স হওয়া। সূরা নিসার ৬ নং আয়াত কে এই দাবির পক্ষে রেফারেন্স হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। 26
কুরআন, বিভিন্ন তাফসীর গ্রন্থ, ফিকহ গ্রন্থ থেকে আমরা দেখলাম যে, এই আয়াতে- نِّکَاحَ, শব্দ দ্বারা প্রাপ্ত বয়স বুঝনো হয়েছে এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া বা বিয়ের বয়স হওয়া। প্রাপ্ত বয়স্ক বা বিয়ের বয়সের আলামত হলো স্বপ্নদোষ হওয়া, পিউবিক এলাকায় চুল গজানো, এবং কারো কারো মতে বয়স ১৫ বছর হওয়া।
ছেলে এবং মেয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়েছে কি-না তা বুঝার উপায় নিয়ে আরো কিছু ফতোয়া;
বয়ঃসন্ধি হয় যখন পুরুষদের ক্ষেত্রে তিনটি জিনিসের মধ্যে একটি ঘটে:
- ভেজা স্বপ্ন
- পিউবিক এলাকায় মোটা চুলের বৃদ্ধি
- পনের বছর বয়সে পৌঁছানো
যদি এই তিনটি জিনিসের মধ্যে একটি ঘটে তবে ব্যক্তিটি বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেছে। মহিলাদের ক্ষেত্রে একটি চতুর্থ লক্ষণ রয়েছে, যথা ঋতুস্রাব শুরু হওয়া। 27 28 29 30
সহবাসের জন্য সক্ষম হওয়ার স্বপক্ষে দলিল
আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমরা কতক যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোন কিছু ছিল না। এই হালতে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। কেননা, সওম তার যৌনতাকে দমন করবে। [১৯০৫] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৬)
বিবাহ করার সামর্থ্য বলতে দুইটি বিষয় বুঝানো হয়: প্রথম বিষযটি হলো: বিবাহ করার সামর্থ্য এবং নিজের স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষমতা।দ্বিতীয় বিষযটি হলো: যৌন ক্ষমতা বা সংগমের ক্ষমতা। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজের স্ত্রীর ভরণপোষণের ক্ষমতা রাখবে এবং যৌন ক্ষমতা বা সঙ্গমের ক্ষমতা রাখবে, সে ব্যক্তি বিবাহ করবে। 31
ইমাম শাফি‘ঈ ও তার সাথীগণ বলেছেন,
বাবা তাঁর মেয়েকে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পূর্বে তার অনুমতি ছাড়া বিবাহ না দেয়া মুস্তাহাব, যাতে সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বামীর সংসারে বন্ধি হতে বাধ্য না হয়। আর ছোট বিবাহিতার সাথে বাসরের সময়ের ব্যাপারে স্বামী এবং ওয়ালী যদি এমন বিষয়ে ঐকমত্য হয় যাতে ছোট মহিলার উপর ক্ষতির আশংকা নেই। তবে উক্ত মহিলার সঙ্গে বাসর কিংবা সহবাস করা যাবে। ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ ও আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ উক্ত মহিলার সঙ্গে বাসর তখনই করা যাবে যখন তার সহবাসে সক্ষমতা আসবে, তবে এটা মহিলা ভেদে ভিন্ন হতে পারে। কোনো মহিলার যদি ৯ বছরের পূর্বেই সহবাসের সক্ষমতা আসে তবে তার সাথে বাসরে কোনো বাধা নেই। অন্যদিকে কোনো মহিলার ৯ বছরের পরেও যদি সহবাসের সক্ষমতা না আসে, তবে তার সঙ্গে বাসর করার অনুমতিও নেই। 1
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্ষতি করাও যাবে না, ক্ষতি সহাও যাবে না। 32
বিয়ের জন্য মেয়ের সম্মতি থাকার স্বপক্ষে দলীল
ইসলামে উত্তম বিবাহের অন্যতম একটি শর্ত হচ্ছে, বিয়েতে কনের সম্মতি থাকা।
আব্দুল্লাহ ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক কুমারী মেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অভিযোগ করে বলল, তার অসম্মতিতে পিতা তাকে বিয়ে দিয়েছে। এটা শুনে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে (স্বামীর সংসারে থাকা বা না থাকার ইচ্ছার) অধিকার প্রদান করলেন। (আবূ দাঊদ)
ব্যাখ্যাঃ আলোচ্য হাদীসে এ মর্মে দলীল রয়েছে যে, কুমারী মেয়েকে বিবাহের জন্য বাধ্য করা বাবার জন্য হারাম এবং বাবা ছাড়া অন্য কোনো ওয়ালী তাকে বিবাহে বাধ্য করতে পারবে না। জোরপূর্বক কোনো মেয়েকে বিবাহ দেয়া বাবার জন্য বৈধ নয়। এমন মত ব্যক্ত করেছেন ইমাম আবূ হানীফাহ্ (রহঃ)। (‘আওনুল মা‘বূদ ৪র্থ খন্ড, হাঃ ২০৯৬)33
আবূ সালামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন বিধবা নারীকে তার সম্মতি ব্যতীত বিয়ে দেয়া যাবে না এবং কুমারী মহিলাকে তার অনুমতি ছাড়া বিয়ে দিতে পারবে না। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! কেমন করে তার অনুমতি নেয়া হবে। তিনি বললেন, তার চুপ থাকাটাই হচ্ছে তার অনুমতি। [1] [৬৯৭০; মুসলিম ১৬/৮, হাঃ ১৪১৯, আহমাদ ৯৬১১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬০)
[1] এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইমাম আবূ হানীফা (রহ.) বলেছেন- অলী বিবাহিত ও অবিবাহিত মেয়েকে কোন নির্দিষ্ট ছেলেকে বিয়ে করতে বাধ্য করতে পারে না। অতএব পূর্বে বিবাহিত মেয়েদের কাছ থেকে বিয়ের জন্য রীতিমত আদেশ পেতে হবে এবং অবিবাহিত বালেগ মেয়ের কাছ থেকে যথারীতি অনুমতি নিতে হবে। এ সম্পর্কে ইমাম মুসলিম হাদীস বর্ণনা করেছেন- পূর্বে বিবাহিত মেয়েরা তাদের নিজেদের বিয়েতে মত জানানোর ব্যাপারে তাদের অলী অপেক্ষাও বেশি অধিকার রাখে। আর পূর্বে অবিবাহিত মেয়েদের নিকট তাদের পিতা বিয়ের মত জানতে চাইলে তাদের চুপ থাকাই তাদের অনুমতিজ্ঞাপক। 34
মেয়ের অভিবাবকের সম্মতি থাকার স্বপক্ষে দলিল
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে নারীকে তার অভিভাবক বিবাহ দেয়নি তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল, তার বিবাহ বাতিল। স্বামী তার সাথে সহবাস করলে তাতে সে মাহরের অধিকারী হবে। তাদের মধ্যে মতবিরোধ হলে সে ক্ষেত্রে যার অভিভাবক নাই, শাসক তার অভিভাবক। 35
এখানে আরো একটি বিষয় পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন যে, যদি সুপষ্ট কোনো কল্যাণ থাকে তবে নাবিলাকা মেয়েকে বিয়ে দেওয়া জায়েজ। এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে, স্বামী স্ত্রীর সাথে ততদিন সহবাস করতে পারবে না, যতদিন স্ত্রী সহবাসের জন্য উপযুক্ত না হয়।36 37 এক্ষেত্রে সাবালিকা হওয়ার পর মেয়ে চাইল উক্ত বিয়ে বাতিল করতে পারবে।
খানসা বিনতে খিযাম আল আনসারিয়্যাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, যখন তিনি অকুমারী ছিলেন তখন তার পিতা তাকে বিয়ে দেন। এ বিয়ে তিনি অপছন্দ করলেন। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিয়ে বাতিল করে দিলেন। [৫১৩৯, ৬৯৪৫, ৬৯৬৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬২) 38
কোনো পিতা চাইলে কী অপ্রাপ্ত বয়স্ক কুমারী মেয়েকে তার সম্মতি ছাড়াই বিয়ে পারে?
ইসলামে উত্তম বিবাহের শর্তের মধ্যে অন্যতম একটি শর্ত হলো মেয়ের সম্মতি নেওয়া। তবে অলি বা মেয়ের বাবা চাইলে মেয়ের সম্মতি ছাড়াই মেয়েকে বিয়ে দিতে পারবে। মুক্তমনা, নাস্তিকদের অভিযোগ হলো যেহেতু কুমারি বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে সম্মতি ছাড়াই দেওয়া বৈধ সেহেতু ইসলামে শিশু বিবাহ জায়েজ।
এটা সত্য যে, কোনো পিতা চাইলে তার মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলেও বিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু এখানে কিছু শর্ত আছে। প্রথম শর্ত হলো এমন বিয়েতে সুস্পষ্ট কোনো কল্যাণ থাকতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হলো মেয়ে যতদিন সহবাস করার জন্য পরিপক্কতা অর্জন করবে না বা সক্ষমতা অর্জন করবে না ততদিন স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে পারবে না। 39 37 এক্ষেত্রে সাবালিকা হওয়ার পর মেয়ে চাইল উক্ত বিয়ে বাতিল করতে পারবে।
খানসা বিনতে খিযাম আল আনসারিয়্যাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, যখন তিনি অকুমারী ছিলেন তখন তার পিতা তাকে বিয়ে দেন। এ বিয়ে তিনি অপছন্দ করলেন। এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিয়ে বাতিল করে দিলেন। [৫১৩৯, ৬৯৪৫, ৬৯৬৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৫৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬২) 38
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংসারে পাঠাতে চাচ্ছিলেন বিধায় আমার দৈহিক পরিপুষ্টির জন্য চিকিৎসা করাতেন। কিন্তু তা কোন উপকারে আসলো না। অবশেষে আমি তাজা খেজুরের সাথে শসা মিশিয়ে খেলাম এবং উত্তমরূপে দৈহিক পরিপুষ্টি লাভ করলাম। 40
এই হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, আয়েশা (রাঃ) শারিরীকভাবে সক্ষম ছিলো না বিধায় তাকে সক্ষমতা অর্জনের জন্য চিকিৎসা করানো হয়েছে এবং শারিরীক সক্ষমতা অর্জনের পরেই তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট গিয়েছে। যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলেও সহবাস করা যেত, তবে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আয়েশা (রাঃ) কে ৬ বছর বয়সে বিয়ে করে ৯ বছর বয়সে ঘরে তুলে নিতেন না।
ইবনে বাত্তাল (রহ) শরহে সহীহ বুখারী গ্রন্থে উল্লেখ করেন,
উলামাদের ইজমা রয়েছে যে, পিতাদের জন্য তাদের অল্প বয়সী কন্যাদের বিবাহ দেওয়া জায়েজ এমনকি তারা দোলনায় থাকলেও। তবে তাদের স্বামীদের জন্য তাদের সাথে মিলন করা জায়েয নয় যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সহবাস করার উপযুক্ত হয়।41
আমাদের প্রশ্ন হলো, কেন একটি বাল্যবিবাহকে আমরা খারাপ বলি? এর উত্তর হলো, বাল্যবিবাহ মানে এমন একজন মেয়ে বা ছেলের বিবাহ হওয়া যারা এখনো শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য পরিপক্কতা অর্জন করেনি বা মানসিকভাবেও পরিপক্কতা অর্জন করেনি। এখন ইসলামে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে বিয়ে দেওয়া জায়েজ শর্ত সাপেক্ষে। শর্তগুলোর মধ্যে একটি হলো, সুস্পষ্ট কল্যাণ থাকতে হবে এবং অন্যটি হলো স্ত্রী যতদিন শারীরিক সম্পর্কের জন্য পরিপক্ক হবে না ততদিন তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করা নিষেধ। তাহলে সাধারণত আমরা যেটাকে শিশু বিবাহ বা বাল্যবিবাহ বলে থাকি, যেখানে একজন শিশু বা অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের সাথে বিবাহের পর শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা হয়, মেয়ে এই শর্তে বিবাহও বাতিল করতে পারবে না যে, ‘তার বিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হয়েছে, এখন সে প্রাপ্ত বয়স্ক তাই সে এখন বিয়ে বাতিল করতে পারবে! কিন্তু ইসলামে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে বিয়ে করার পর তার সাথে সহবাস করা ততদিন পর্যন্ত জায়েজ নেই, যতদিন স্ত্রী সহবাস করার জন্য পরিপক্ক হবে। আবার যেহেতু স্ত্রীর বিয়ে হয়েছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক থাকাকালীন তাই তার সম্মতি প্রদানের কোনো সুযোগ ছিলোনা বিধায় প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর স্ত্রী চাইলে উক্ত বিবাহ বাতিল করতে পারে। সুতরাং, প্রচলিত বাল্যবিবাহ বা শিশু বিবাহের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে বিবাহের সময় কি হযরত আয়েশা (রাঃ) বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেছিলেন?
আয়েশা (রাঃ) এর নিজের মতঃ
আয়িশা (রা.) বলেছেন; কোনো বালিকা নয় বছরে পদার্পণ করলে সে মহিলা বলে গণ্য করা হবে। 42
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংসারে পাঠাতে চাচ্ছিলেন বিধায় আমার দৈহিক পরিপুষ্টির জন্য চিকিৎসা করাতেন। কিন্তু তা কোন উপকারে আসলো না। অবশেষে আমি তাজা খেজুরের সাথে শসা মিশিয়ে খেলাম এবং উত্তমরূপে দৈহিক পরিপুষ্টি লাভ করলাম। 43
এই হাদিসগুলো থেকেই প্রমাণিত হয় যে, আয়েশা (রাঃ) শারিরীকভাবে সক্ষম ছিলো না বা বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছায়নি বিধায় তাকে সক্ষমতা অর্জনের জন্য চিকিৎসা করানো হয়েছে এবং শারিরীক সক্ষমতা অর্জনের পরেই তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট গিয়েছে। যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হলেও সহবাস করা যেত, তবে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আয়েশা (রাঃ) কে ৬ বছর বয়সে বিয়ে করে ৯ বছর বয়সে ঘরে তুলে নিতেন না।
আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার ছয় অথবা সাত বছর বয়সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিয়ে করেন। আমরা মদীনায় আগমন করলে একদল মহিলা আসলেন। বর্ণনাকারী বিশরের বর্ণনায় রয়েছেঃ আমার নিকট (আমার মা) উম্মু রূমান (রাঃ) আসলেন, তখন আমি দোলনায় দোল খাচ্ছিলাম। তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন, আমাকে প্রস্তুত করলেন এবং পোশাক পরিয়ে সাজালেন। অতঃপর আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পেশ করা হলো। তিনি আমার সঙ্গে বাসর যাপন করলেন, তখন অমার বয়স নয় বছর। মা আমাকে ঘরের দরজায় দাঁড় করালেন এবং আমি উচ্চহাসি দিলাম। ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, অর্থাৎ আমার মাসিক ঋতু হয়েছে। আমাকে একটি ঘরে প্রবেশ করানো হলো। তাতে আনসার গোত্রের একদল মহিলা উপস্থিত ছিলেন। তারা আমার জন্য কল্যাণ ও বরকত কামনা করলেন। 44
আয়েশা (রাঃ)-এর কথা দ্বারাই বোঝা যাচ্ছে তিনি নয় বছরে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছে গিয়েছিলো। ইমাম আবু দাউদের এই হাদিস নিয়ে নাস্তিকরা তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে যে, এটি কেবল ইমাম আবু দাউদের মত। তাই এটি গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু তাদের দাবিটি সত্য নয়। কারণ ইমাম আবু দাউদের মত গ্রহণযোগ্য নয় এমন কোনো হুকুম ইসলামী শরিয়াতে নেই। ইমাম আবু দাউদ ইসলামের বড় বড় পন্ডিতদের মধ্যে অন্যতম একজন। ওনার লিখিত হাদিস গ্রন্থ সুনান আবু দাউদ গ্রহণযোগ্য হাদিস গ্রন্থগুলোর মধ্যে একটি এবং এটি কিতাবে সিয়া সিত্তার অন্যতম একটি হাদিস গ্রন্থ। স্বয়ং নাস্তিকরাও ইমাম আবু দাউদের হাদিস থেকে রেফারেন্স গ্রহণ করে থাকে! আয়িশা (রাঃ) থেকেও সুস্পষ্টভাবে বর্ণণা রয়েছে যে, তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলো যখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার সাথে সংসার শুরু করেন। ইসলামী শরিয়াতের হুকুমও হলো এই যে, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের সাথে সহবাস করা জায়েজ নেই। এই দাবির পক্ষে গ্রহণযোগ্য উলামাদের মতামত রয়েছে এবং উলামাদের ইজমাও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মত,
ইমাম শাফেঈ (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,
وعن الشافعي، قال: رأيت باليمن بنات تسع يحضن كثيراً
আমি ইয়েমেনে নয় বছর বয়সী মেয়েদের দেখেছি যাদের অধিকাংশই ঋতুবতী হয়েছিলো। 45
আব্বাদ ইবনে আব্বাদ আল-মুহলবি বলেছেন,
بنت ثَمَان عَشْرَةَ سَنَةً وَلَدَتْ لِتِسْعِ سِنِينَ ابْنَةً فَوَلَدَتِ ابْنَتُهَا لِتِسْعِ سِنِينَ ابْنَةً فَصَارَتْ هِيَ جَدَّةً وَهِيَ ابْنَةُ ثَمَانِي عَشْرَ سَنَةً
আমি মুহলাবাহতে একজন মহিলাকে দেখেছি যিনি ১৮ বছর বয়সে নানি হয়েছেন। তিনি তার নয় বছর বয়সে জন্মদান করেছেন (তার মেয়েকে) এবং তার মেয়ে তার সন্তানকে জন্ম দিয়েছে নয় বছর বয়সে, এভাবেই সেই মহিলা ১৮ বছরে নানি হয়ে গিয়েছেন। 46
পুতুল খেলার হাদিস কি প্রমাণ করে যে আয়েশা (রাঃ) বিয়ের সময় বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছায়নি?
নাস্তিকদের একটি ওয়েবসাইটে পুতুল খেলার হাদিস দেখিয়ে দাবি করেছে যে, সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে খাইবারের যুদ্ধের সময়ও আয়িশা (রাঃ) পুতুল নিয়ে খেলতেন, অথচ ইসলামে বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছানোর পর পুতুল নিয়ে খেলা নিষিদ্ধ। এর দ্বারা বোঝা যায় চৌদ্দ বছর বয়সেও তিনি ইসলামের সাবালিকা হওয়ার বিধান অনুসারে নাবালিকা ছিলেন। এছাড়াও তারা ইবনু হাজার আসকালানী এবং আরো কয়েকটি হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থ থেকে দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, আয়েশা (রাঃ) বিয়ের সময় এবং খায়বারের যুদ্ধের সময় নাবালেক ছিল বা বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছাইনি।
আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক অথবা খায়বারের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। ঘরের তাকের উপর পর্দা ঝুলানো ছিলো। বায়ু প্রবাহের ফলে তার এক পাশ সরে যায় যাতে তার খেলার পুতুলগুলো দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পুতুলগুলো দেখে বললেন, হে আয়িশাহ! এগুলো কি? উত্তরে তিনি বললেন, এগুলো অমার মেয়ে। আর তিনি এগুলোর মধ্যে কাপড়ের তৈরী দু’ ডানাবিশিষ্ট একটি ঘোড়াও দেখতে পেলেন।
তিনি প্রশ্ন করলেনঃ এগুলোর মধ্যে ওটা কি দেখতে পাচ্ছি? তিনি বললেন, ঘোড়া। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তার উপর আবার ওটা কি? তিনি বললেন, দু’টো পাখা। তিনি বললেন, এ আবার কেমন ঘোড়া, যার পাখা আছে! আমি বললাম, আপনি কি শুনেননি যে, সুলাইমান (আঃ)-এর ঘোড়ার কয়েকটি পাখা ছিলো! আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন, যাতে আমি তাঁর সামনের সারির দাঁত দেখতে পেলাম। 47
নাস্তিকরা এই হাদিস দেখিয়ে দাবি করে একজন প্রাপ্ত কখনোই পুতুল নিয়ে খেলা করে না! সুতরাং, আয়েশা (রাঃ) বিয়ের সময় প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলো না। এর জবাব হলো;
প্রথমত, আয়েশা (রাঃ) নিজ মুখেই বলেছে যে, বিয়ের সময় তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন। তাই পুতুল খেলার হাদিস বা অন্য যে কোনো হাদিস এনে এটা প্রমাণ করা যায় না যে, তিনি বিয়ের সময় প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন না।
দ্বিতীয়ত, আয়েশা (রাঃ) ৬১৩ খ্রিস্টাব্দের শেষ দিকে, কিংবা ৬১৪ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে জন্মগ্রহণ করেন। খয়বরের যুদ্ধ সংগঠিত হয় ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে,48 তাবুকের যুদ্ধ সংগঠিত হয় অক্টোবর ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে। 49 হাদিস অনুযায়ী খয়বরের যুদ্ধের পর আয়েশা (রাঃ)-এর বয়স হবে ১৫ এর কাছাকাছি, আর তাবুকের যুদ্ধের পর ১৬ এর কাছাকাছি। এখন দেখা যাচ্ছে, ১৫ বছর বয়সেও তিনি পুতুল দিয়ে খেলতেন। তারমানে পুতুল খেলার হাদিস দিয়ে এটা প্রমাণ করা সম্ভব নয় যে,আয়েশা (রাঃ) বিয়ের সময় নাবালেগ ছিলো।
তৃতীয়ত, পুতুল নিয়ে কেবল নাবালেগ বাচ্চারা খেলে না। যুক্তরাজ্যের ডেইলি মেইল থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ৪৮ বছরের মহিলারাও পুতুল ছাড়া থাকতে পারে না। 50 ট্র্যাভেলজ জরিপ অনুসারে, প্রায় 35 শতাংশ ব্রিটিশ প্রাপ্তবয়স্করা টেডি বিয়ারের সাথে ঘুমায়। 51
শরহে সহীহ বুখারি গ্রন্থের একটা হাদিসের ব্যখ্যাতে বলা হয়েছে যে, পুতুল খেলার সময় আয়েশা (রাঃ) নাবালেক ছিলো। তাই আয়েশা (রাঃ) এর জন্য পুতুল খেলা জায়েজ ছিলো, কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য এটা মাকরুহ।
শরহে সহীহ বুখারী গ্রন্থের লেখক, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ উসমান গণি (রহি)। তিনি সাহাবা, তাবেঈ বা তাবে তাবেঈন, কিংবা কোনো বড় ইমামও নয়। শরহে বুখারী গ্রন্থ ওনার নিজস্ব ব্যাখ্যা। আয়েশা (রাঃ) থেকে সুস্পষ্ট হাদিস রয়েছে যে, প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরেই তিনি রাসুল (সাঃ) এর ঘরে গিয়েছেন। 40
ইমাম আবু দাউদের মতেও আয়েশা (রাঃ) প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলো।52
ইমাম মালিক, শাফি‘ঈ ও আবূ হানীফাহ্ (রহঃ) বলেনঃ
উক্ত মহিলার (যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক কারো সাথে বিবাহ হয়) সঙ্গে বাসর তখনই করা যাবে যখন তার সহবাসে সক্ষমতা আসবে, তবে এটা মহিলা ভেদে ভিন্ন হতে পারে। কোনো মহিলার যদি ৯ বছরের পূর্বেই সহবাসের সক্ষমতা আসে তবে তার সাথে বাসরে কোনো বাধা নেই। অন্যদিকে কোনো মহিলার ৯ বছরের পরেও যদি সহবাসের সক্ষমতা না আসে, তবে তার সঙ্গে বাসর করার অনুমতিও নেই। 53
আয়েশা (রাঃ) নিজেই বলেছেন তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলো, এবং ইমাম আবু দাউদও একই কথা বলেছেন। ইমাম মালিক, ইমাম শাফি;ঈ ও ইমাম আবু হানিফা সহ গ্রহণযোগ্য সকল স্কলারদের মতে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের সাথে সহবাহ জায়েজ নেই। এমনকি উলামাদের মধ্যে ইজমা রয়েছে যে, যতক্ষণ না সহবাসের উপযুক্ত হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সহবাস করা জায়েজ নেই। তাই কোনো একজন লোকের নিজস্ব ব্যাখ্যা দিয়ে এটা প্রমাণিত হয়ে যায় না যে, আয়েশা (রাঃ) যখন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর ঘরে গিয়েছেন তখন তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলো।
এছাড়া, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পুতুল নিয়ে খেলা হারাম নয়, মাকরুহ। তাই কাউকে পুতুল নিয়ে খেলার অনুমতি দেওয়ার মানে সে নাবালেক হয়ে যায় এটা খুবই হাস্যকর একটি যুক্তি। বরং, ইবনুল মালিক (রঃ) এর মতে, প্রাণীর প্রতিকৃতি দ্বারা খেলার প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অস্বীকৃতি না থাকা এবং তার ঘরে ঐ খেলনা অবশিষ্ট থাকা প্রমাণ করে যে, এ ঘটনা তা হারাম হওয়ার পূর্বের ঘটনা। (মিরকাতুল মাফাতীহ) 54
সুতরাং, পুতুল খেলার হাদিস থেকে এটা কিছুতেই প্রমাণিত হয়না যে, বিয়ের সময়ে আয়েশা (রাঃ) প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলো না।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে বিবাহের সময় কি হযরত আয়েশা (রাঃ) শারিরীকভাবে সক্ষম ছিলো?
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সংসারে পাঠাতে চাচ্ছিলেন বিধায় আমার দৈহিক পরিপুষ্টির জন্য চিকিৎসা করাতেন। কিন্তু তা কোন উপকারে আসলো না। অবশেষে আমি তাজা খেজুরের সাথে শসা মিশিয়ে খেলাম এবং উত্তমরূপে দৈহিক পরিপুষ্টি লাভ করলাম। 40
এই হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, আয়েশা (রাঃ) শারিরীকভাবে সক্ষম ছিলো না বিধায় তাকে সক্ষমতা অর্জনের জন্য চিকিৎসা করানো হয়েছে এবং শারিরীক সক্ষমতা অর্জনের পরেই তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট গিয়েছে।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে আয়েশা (রাঃ) এর বিয়েতে কি আয়েশা (রাঃ) এর সম্মতি ছিলো?
আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এ আয়াতটি নাযিল হলো (অনুবাদ) ’’যদি তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের সন্তুষ্টি চাও’’ (সূরা আল-আহযাব ৩৩ঃ ২৯), তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট প্রবেশ করে বলেন, হে ’আয়িশাহ! আমি তোমাকে একটি কথা জিজ্ঞেস করবো। তুমি তোমার পিতা-মাতার সাথে পরামর্শ না করে সে সম্পর্কে তাড়াহুড়া করে কিছু বলবে না।
আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! তিনি জানতেন যে, নিশ্চয় আমার পিতা-মাতা কখনো তাঁর থেকে আমার বিচ্ছেদের পক্ষে মত দিবেন না। ’আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, এরপর তিনি আমাকে এ আয়াতটি পড়ে শুনান (অনুবাদ) ’’হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের বলুন, তোমরা যদি পার্থিব জীবন ও এর ভূষণ চাও..(সূরা আল-আহযাব ৩৩ঃ ২৮)। তখন আমি বললাম, এ সম্পর্কে আমার পিতা-মাতার সাথে আমি আর কী পরামর্শ করবো! আমি আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকেই গ্রহণ করলাম। 55
আয়েশা (রাঃ) কি ভয়ে রাসুল (সাঃ) থেকে তালাক চান নি?
নাস্তিকদের একটা ওয়েবসাইটে লিখেছে যে, আয়েশা (রাঃ) মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট তালাক চেয়েছন এবং তালাকের পর নবীর কাছে খরপোষ চেয়েছেন। এর ফলে আবু বকর (রাঃ) এবং ওমর (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) এবং হাফসা (রাঃ) মারধর করেছেন। তাই মারধরের ভয়ে আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ) তালাক দেয়নি। এবং আয়েশা (রাঃ) যেহেতু নবী (সাঃ) স্ত্রী ছিলো তাই অন্য পুরুষের জন্য তিনি হারাম। অর্থাৎ, অন্য কোনো পুরুষ চাইলেই আয়েশা (রাঃ) বিয়ে করতে পারতো না। তাই আয়েশা (রাঃ) ভয়ে রাসুল (সাঃ) থেকে চায়নি।
যে হাদিস থেকে নাস্তিকরা এহেন অভিযোগ করেন তা নিন্মরুপ;
যুহায়র ইবনু হারব (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাঃ) এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে উপস্থিতির অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তিনি তার দরজায় অনেক লোককে উপবিষ্ট দেখতে পেলেন। তবে তাদের কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় নি। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তিনি আবূ বকর (রাঃ) কে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলে তিনি প্রবেশ করলেন। এরপর উমর (রাঃ) এলেন এবং তিনি অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন তাকেও প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হল। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে চিন্তিত ও নীরব বসে থাকতে দেখলেন আর তখন তার চতুষ্পার্শ্বে তাঁর সহধর্মিনীগণ উপবিষ্টা ছিলেন।
তিনি (বর্ণানাকারী জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ)) বলেন, উমর (রাঃ) বললেনঃ নিশ্চয়ই আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে এমন কথা বলব যা তাঁকে হাসাবে। এপর তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যদি দেখতেন খারিজার কন্যা (উমর (রাঃ) এর স্ত্রী) আমার কাছে খোরপোষ তলব করছিল। আমি তার দিকে উঠে গেলাম এবং তার ঘাড়ে ঘুষি মারলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং বললেন, আমার চতুষ্পার্শ্বে তোমরা যাদের দেখতে পাচ্ছ তারা আমার কাছে খোরপোষ দাবী করছে।
অমনি আবূ বকর (রাঃ) আয়িশা (রাঃ) এর দিকে ছুটলেন এবং তাঁর গর্দানে ঘুষি মারলেন। উমর (রাঃ)ও দাঁড়িয়ে গেলেন এবং হাফসা (রাঃ) এর দিকে অগ্রসর হয়ে তাঁর ঘাড়ে ঘুষি মারলেন। তাঁরা উভয়ে বললেন, তোমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এমন জিনিস দাবী করছে যা তাঁর কাছে নেই। তখন তাঁরা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনীগণ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা আর কখনো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এমন জিনিস চাইব না যা তাঁর কাছে নেই।
এরপর তিনি তাঁদের (তাঁর সহধর্মিনীগণের) থেকে একমাস কিংবা ঊনত্রিশ দিন পৃথক রইলেন। এপর তাঁর প্রতি এই আয়াত নাযিল হলঃ (অর্থ) “হে নবী! আপনি আপনার সহধর্মিনীদের বলে দিন, তোমরা যদি পার্থিব জীবনের ভোগ ও এর বিলাসিতা কামনা কর, তাহলে এসো আমি তোমাদের ভোগ-বিলাসে ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদায় করে দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও পরকালকে কামনা কর তাহলে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (আহযাবঃ ২৮ ২৯)
তিনি [জাবির (রা)] বলেন, তিনি (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আয়িশা (রাঃ) কে দিয়ে (আয়াতের নির্দেশ তামীল করতে) শুরু করলেন। তখন তিনি বললেন, হে আয়িশা! আমি তোমার কাছে একটি (গুরত্বপূর্ণ) বিষয়ে আলাপ করতে চাই। তবে সে বিষয়ে তোমার পিতা-মাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে তোমার ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করাই আমি পছন্দ করি।
তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! সে বিষয়টা কি (আমি জানতে পারি)? তখন তিনি তার কাছে এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন। তিনি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার ব্যাপারে আমি কি আমার পিতা-মাতার কাছে পরামর্শ নিতে যাব? (এর কোন প্রয়োজন নেই)। না, বরং আমি আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও আখিরাতকেই বেছে নিয়েছি। তবে আপনার সকাশে আমার একান্ত নিবেদন, আমি যা বলেছি সে সম্পর্কে আপনি আপনার অন্যান্য সহধর্মিনীগণের কারো কাছে ব্যক্ত করবেন না। তিনি বললেন, তাদের যে কেউ সে বিষয় আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমি অবশ্যই তাঁকে তা বলে দিব। কারণ আল্লাহ আমাকে কঠোরতা আরোপকারী ও হঠকারীরূপে নয় বরং সহজ পন্থায় (শিক্ষাদানকারী) হিসাবে প্রেরণ করেছেন।
খরপোষ চাওয়ার মানে কি তালাক চাওয়া?
হাদিসটি ভালোভাব লক্ষ্য করুন। এখানে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি তা হলো, আবূ বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) চিন্তিত ও নীরব বসে থাকতে দেখার কারনে উমর (রাঃ) রাসুল (সাঃ) হাসানোর জন্য এমন কোনো কথা বলার পরিকল্পনা করেছিলো যাতে রাসুল (সাঃ) হাসেন। ফলে উমর (রাঃ) বললেন তার স্ত্রী তার নিকট খরপোষ চেয়েছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন এবং বললেন, আমার চতুষ্পার্শ্বে তোমরা যাদের দেখতে পাচ্ছ (রাসুল (সাঃ) স্ত্রীগণ) তারা আমার কাছে খোরপোষ দাবী করছে। রাসুল (সাঃ) এর মুখ থেকে এই কথা শুনার পর, আবু এবং উমার (রাঃ) আয়েশা (রাঃ) ও হাফসা (রাঃ) এর দিকে ছুটে গেলেন এবং দর্দানে ঘুষি মারলেন। খরপোষ মানে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও নিত্য প্রয়োজনীয় আনুসঙ্গিক জিনিসপত্রকে বুঝায়। ইসলামী পরিভাষায় খোরপোষ বা ভরনপোষণকে নাফকা বলে। নাফকার শাব্দিক অর্থ ব্যয় করা। মানুষ পরিবার-পরিজনের জন্য যা ব্যয় করে তাকে নাফকা বা খোরপোষ বলা হয়।
তাহলে দেখুন, আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) থেকে চেয়েছেন খরপোষ বা ভরণপোষণের জন্য যে সাধারণ খরচ দেওয়া হয় তা! কিন্তু নাস্তিকরা খরপোষকে বানিয়েছেন তালাক! অথচ, এই হাদিসের শেষ অংশেই উল্লেখিত আয়াত (সূরা আহযাব; ৩৩ঃ২৯) থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায় যে রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রীগণ খরপোষ চেয়েছেন, তালাক নয়।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসীরেও উল্লেখ করা হয়ছে,
রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রীগণ রাসুল (সাঃ) থেকে টাকা-পয়সা, বা ধন-মাল চাইতে শুরু করেছে। 56 তালাক চাওয়া হয়নি।
টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ চাওয়ার কারণে হযরত উমর (রাঃ) বলেছিলো, তোমরা রাসুলের কাছ থেকে এমন কিছু কেন চাচ্ছো যা তার কাছে নেই? তখন তাঁরা (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনীগণ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা আর কখনো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এমন জিনিস চাইব না যা তাঁর কাছে নেই। সূরা আহযাব; ৩৩ঃ২৮-২৯ আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট এটাই যে, রাসুল (সাঃ) স্ত্রীরা রাসুল (সাঃ) থেকে খরপোষ দাবি করার পর একমাস কিংবা ঊনত্রিশ দিন পৃথক রইলেন। এপর এই আয়াত নাযিল হল; “হে নবী! আপনি আপনার সহধর্মিনীদের বলে দিন, তোমরা যদি পার্থিব জীবনের ভোগ ও এর বিলাসিতা কামনা কর, তাহলে এসো আমি তোমাদের ভোগ-বিলাসে ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদায় করে দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসুল ও পরকালকে কামনা কর তাহলে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন।” (আহযাব; ৩৩ঃ ২৮-২৯) এরপর রাসুল (সাঃ) তার স্ত্রীদের সবাই ইহলৌকিক প্রাচুর্য ও স্বাচ্ছন্দ্যকে কেউ গ্রহণ না করে আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুল (সাঃ)কে গ্রহণ করেছে।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায়, তাফসীরে তাফহিমুল কুরআনে উল্লেখা করা হয়েছে,
দেখুন তাফসীরে তাফহিমুল কুরআনেও বলা হচ্ছে রাসুল (সাঃ) এর স্ত্রীগণ রাসুল (সাঃ) এর নিকট খরচপত্রের জন্য টাকা চেয়েছে। 57 তালাক চাওয়া হয়নি।
তাফসীরে মারেফুল কুরআনেও বলা হয়েছে,
রাসুল (সাঃ) স্ত্রীগণ রাসুল (সাঃ) থেকে জীবিকা ও অন্যান্য খচরাদির পরিমাণ বৃদ্ধি করে দিতে বলা হয়েছে। 58
তালাক দেওয়ার পর নবীর স্ত্রীগণদের কেউ বিয়ে করতে পারবে না, এই ভয়েই কি আয়েশা (রাঃ) নবী (সাঃ) থেকে তালাক চায়নি?
আয়েশা (রাঃ) কেন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে চায়নি এর কারণে আরো একটি মিথ্যা অভিযোগ নাস্তিকদের মুখে প্রায় সময়ই শুনা যায় যে, নবীর স্ত্রীরা তো উম্মাহাতুল মুমিনীন! মানে মুমিনদের মা। তাই নবীর স্ত্রীদের অন্য কেউ বিয়ে করতে পারবে না! আর এই ভয়েই নাকি আয়েশা (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে তালাক চায়নি!
এই অভিযোগটি পুরোপুরি বানোয়াট! ডাহা মিথ্যা অভিযোগ! তালাক প্রদান করা হলে নবীর স্ত্রীরা আর উম্মাহাতুল মুমিনীন থাকে না। সূরা হুযরাতের ২৮-২৯ নং আয়াতের তাফসীরেই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আছে। এই বিষয়ে ইবনে কাসির (রহ) তাফসীরে ইবনে কারিসের বলেন, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যদি তার স্ত্রীদের তালাক প্রদান করেন তবে তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা জায়েজ হবে। 59
মাওলানা মওদূদি (রহ) তাফসীরে তাফহীমুল কুরআনে উল্লেখ করেন, তালাক প্রদানের পর নবীর স্ত্রীগণ মুমিনের মাতার তালিকা থেকে তাদের নাম কাঁটা যেত এবং অন্য মুসলমানদের সাথে তাদের বিবাহ আর হারাম থাকতো না। 57
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সমালোচনাকারী শাতিমে রাসুল! শাতিমে রাসুলের শাস্তি হচ্ছে মৃত্যু দন্ড তাই আয়েশা (রাঃ) মৃত্যুর ভয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নামে কখনো অভিযোন আনেনি এবং তালাকও চায়নি?
নাস্তিকদের একটি ওয়েব সাইটে লিখেছে, ইসলামের শরিয়তের বিধান অনুসারে, নবী মুহাম্মদের যেকোন সমালোচনাকারী শাতিমে রাসুল হিসেবে গণ্য এবং সে মৃত্যুদণ্ডের উপযুক্ত ব্যক্তি। আয়িশা যদি সাহস করে নবীর সম্পর্কে অভিযোগ করতোও, তাহলে তাকে কী আর জীবিত থাকতে দেয়া হতো? আয়িশা কী এটি জানতেন না যে, নবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে তার ফলাফল কী হতে পারে? সেই সময়ে খলিফা কারা ছিলেন? তার পিতা আবু বকর, উমর, উসমান আলী, এরা। এরা সকলেই ছিল নবীর খুবই ঘনিষ্ঠ এবং নবীর নামেই তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার এবং খিলাফতের প্রধান হওয়ার সুযোগ হয়েছে। তারা কী এরকম কথা সহ্য করতো? যার নামে তাদের খিলাফত, রাজত্ব এবং ক্ষমতা, তার সম্পর্কে কী স্বাধীনভাবে কেউ অভিযোগ করতে পারতো? আসুন দেখি, আবু বকরের আমলে আবু বকরের বক্তব্য অনুসারে নবীকে মন্দ বলার শাস্তি কী!
নাস্তিকদের এই অভিযোগটিও একটি বানোয়াট, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যাচার। প্রথমত, রাসুল (সাঃ) এর কাছে থেকে তালাক নিলে কেউ সাতিমে রাসুল হবে, এমন কোনো দলিল নেই! বরং এমন দলিল রয়েছে যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর থেকে ওনার স্ত্রীরা তালাক নিয়েছেন। যদি কোনো স্ত্রী তালাক নিলে সে সাতিমে রাসুলের অন্তভূক্ত হয়ে যায় এবং তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় তবে যে স্ত্রী তালাক নিয়েছে তাকে কেন মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়নি?
আওযা’ঈ (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি যুহরী (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোন্ সহধর্মিণী তাঁর থেকে মুক্তি প্রার্থনা করেছিল? উত্তরে তিন বললেনঃ ’উরওয়াহ (রহ.) ’আয়িশাহ (রাঃ) থেকে আমার নিকট বর্ণনা করেছেন যে, জাওনের কন্যাকে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর নিকট একটি ঘরে) পাঠানো হল আর তিনি তার নিকটবর্তী হলেন, তখন সে বলল, আমি আপনার থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি তো এক মহামহিমের কাছে পানাহ চেয়েছ। তুমি তোমার পরিবারের কাছে গিয়ে মিলিত হও।
আবূ ’আবদুল্লাহ ইমাম বুখারী) (রহ.) বলেনঃ হাদীসটি হাজ্জাজ ইব্ন আবূ মানী’ও তাঁর পিতামহ থেকে, তিনি যুহরী থেকে, তিনি ’উরওয়াহ থেকে এবং তিনি ’আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৪) 60
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কি আয়েশা (রাঃ) এর শারিরীক উপযুক্ততা বা এমন কিছু বিবেচনা না করেই দেনমোহর না থাকায় আরেশা (রাঃ) কে ঘরে তুলতে বিলম্ব করেছেন?
এই বিষয়ে উত্তর আমাদের ওয়েবসাইটে ইতোপূর্বে দেওয়া হয়েছে। লিখার লিংকঃ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কি দেনমোহরের অভাবে আয়েশা (রাঃ) কে ঘরে তুলতে বিলম্ব করেছিলেন ? – Faith and Theology (faith-and-theology.com)
যার বিয়ে তার খবর নেই, পাড়াপড়শির ঘুম নেই।
বাংলায় খুব জনপ্রিয় একটা প্রবাদ হলো, যার বিয়ে তার খবর নিএ, পাড়াপড়শির ঘুম নেই। নাস্তিকদের অবস্থাও ঠিক এই প্রবাদের মতোই হয়েছে। আয়িশা (রাঃ) তার বিয়ে নিয়ে কখনো অভিযোগ তো করেইনি বরং তিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে দাম্পত্য জীবনে তারা সুখী ছিলেন তা অনেক হাদিস থেকেই প্রমাণিত। তবুও নাস্তিকরা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও আয়িশা (রাঃ) কে নিয়ে কন্সপিরেসিতে লিপ্ত! এই যেমন, আয়িশা (রাঃ) ভয় পেয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর থেকে তালাক চায় নি! সামাজিক ভয়, আর্থিক নির্ভরতা, ইত্যাদি কারণে তালাক চায় নি! এটা, সেটা, ইত্যাদি! কিন্তু এসব অনুমানের পেছনে তো কোনো দলিল নেই! অনুমান তো আমিও করতে পারি। আমরাও অনুমান করতে পারি যে, যেসব নাস্তিক অনলাইনে এসব মিথ্যাচার করে তারা সকলেই বাসায় তাদের স্ত্রীকে মারধর করে! এর কারণ হিসেবে আমরা বলতে পারি নাস্তিকদের অবাধ জীবন-যাপন, মদ্যপান, একাধিক নারীর সাথে মিলামেশা, ইত্যাদি কারনে তাদের স্ত্রীদের সাথে তাদের বাকবিতন্ডা হওয়ার কারণে তারা স্ত্রীদের মারধর করে। এখন আমরা অনুমান করেছি বলেই কি তা সত্য হয়ে যাবে? অবশ্যই এমনটি হওয়ার কথা নয়। আমরা যখনই দাবির পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করবো তখনই তা সত্য হবে। অনুমানের উপর ভিত্তি করে দাবি করাটা নির্বুদ্ধিতার ফল ছাড়া আর কিছুই না।
নাস্তিকরা তাদের ওয়েবসাইটে এমন যুক্তিও উপস্থাপন করেছে যে, পৃথিবীতে অনেক অপরাধ ঘটে, যেখানে ভিক্টিমের কোন অভিযোগ পাওয়া যায় না। ভিক্টিমের অভিযোগ পাওয়া না গেলেই অপরাধটি ঘটেনি, এরকম বলা শুধু হাস্যকরই নয়, প্রতারণাও বটে। এখন আয়েশা (রাঃ) বিয়ের সময় বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছায়নি, তিনি নির্যাতিতা ছিলো, তিনি ভয় পেয়ে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) থেকে তালাক নেয় নি, এসব দাবির প্রমাণ কি এটা যে, পৃথিবীতে অনেক অপরাধ ঘটে, যেখানে ভিক্টিমের কোন অভিযোগ পাওয়া যায় না। ভিক্টিমের অভিযোগ পাওয়া না গেলেই অপরাধটি ঘটেনি, এরকম বলা শুধু হাস্যকরই নয়, প্রতারণাও বটে? অনেকে ভিক্টিম আছে যারা ক্লেইম করেনা! তাই বলে আয়েশা (রাঃ) নির্যাতিত! বিয়ের সময় তিনি শিশু ছিলো! এগুলা কেমন হাস্যকর প্রমাণ! নিজেদের বিজ্ঞান মনস্ক দাবি করে নাস্তিকরা এসব হাস্যকর যুক্তি দিতে পারে! বিষয়টা আসলেই হাস্যকর।
উপসংহার
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সাথে আয়েশা (রাঃ) এর বিবাহ নিয়ে নাস্তিকদের অভিযোগের মূল কারণ হলো আয়েশা (রাঃ) এর বয়স। অর্থাৎ, বিয়ের সময়ে আয়েশা (রাঃ) এর বয়স কম ছিলো বা তিনি বিয়ের সময়ে প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলো না। উপরে আমরা দেখেছি যে, বিয়ের জন্য পৃথিবীর সকল দেশের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। বিয়ের জন্য বা যৌন সম্মতির জন্য মূলত শারীরিক সক্ষতার বিষয়টি দেখা হয়। তাই পৃথবীবির একেক দেশে বিবাহ এবং যৌন সম্মতির বয়স আলাদা আলাদা। তাই কারো বয়স দেখে আমরা কখনো এটা বিচার করতে পারি না যে বিয়েটি বাল্যবিবাহ ছিল না-কি ছিল না! যদি কোনো মেয়ে শারীরিকভাবে সক্ষম না থাকে তবেই বিয়েটি বাল্যবিবাহ হিসেবে গণ্য হবে। কোনো মেয়ে যে-কোনো বয়সেই শারীরিকভাবে সক্ষম হতে পারে! এটা হতে পারে ৬ বছর আবার হতে পারে ৩০ বছরও! একজন মেয়ে যদি ৩০ বছরেও শারীরিকভাবে সক্ষম না হয় তাহলে ‘১৮ বছরে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়ে যাওয়ার আইন’ দেখিয়ে কি তার সাথে সহবাস করা যাবে? সহবাস করলে তা কি স্বাভাবিকভাবে নেওয়া হবে নাকি ধর্ষণ বলে গণ্য করা হবে? নাস্তিকদের নিকট আমার এই প্রশ্নটি রইলো। একজন যৌক্তিক মানুষ মাত্রই এটা স্বীকার করে নিবে যে কোনো মেয়ে যদি ৩০ বছরেও শারীরিকভাবে সক্ষম না হয় তাকে বিয়ে করাটা বৈধ হবে না। সুতরাং, বিয়ের ক্ষেত্রে তখনই বাল্যবিবাহ বলা যাবে যদি মেয়ে শারীরিকভাবে সক্ষম না থাকে। উপরে ইতোমধ্যেই আমরা প্রমাণ করেছি যে, আয়েশা (রাঃ) বিয়ের সময় শারীরিকভাবে সক্ষম ছিলো এবং বিয়েতে তার সম্মতি ছিলো। সুতরাং, এই বিয়েকে বাল্যবিবাহ বলা নির্বুদ্ধিতার সামিল।
আর পুতুল খেলার হাদিস দিয়েও নাস্তিকরা প্রমাণ করতে চাই যে আয়িশা (রাঃ) যখন মুহাম্মদ (সাঃ) ঘরে এসেছেন তখন তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক ছিলো না। কিন্তু পুতুল খেলার হাদিস মোটেও এমন কিছু প্রমাণ করে না যে আয়িশা (রাঃ) তখন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলো না। ইমাম মালেকের মতে, খেলার ঘটনাটি পুতুল নিয়ে খেলা করা হারাম করার পূর্বের ঘটনা। সুতরাং, এই বিয়েকে বাল্যবিবাহ বলা নির্বুদ্ধিতার সামিল।
রেফারেন্স- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)| হাদিস:৩১২৯ | Mishkat al-Masabih, Hadith No. 3129 (hadithbd.com) [↩][↩]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)| হাদিস:৪৯৩৩ | Sunan Abu Dawood, Hadith No. 4933 (hadithbd.com) [↩]
- Puberty for girls – physical and emotional changes | healthdirect [↩]
- Determinants of menarche – PMC (nih.gov) [↩]
- Puberty and Precocious Puberty | NICHD – Eunice Kennedy Shriver National Institute of Child Health and Human Development (nih.gov) [↩]
- Precocious puberty – Symptoms and causes – Mayo Clinic [↩]
- Puberty: Stages & Signs for Boys & Girls – familydoctor.org [↩]
- US National Health Statistics Report [↩]
- Marriage Registration in China (china-consulate.gov.cn) [↩]
- THE AGE OF CONSENT | English meaning – Cambridge Dictionary [↩]
- Marriageable age – Wikipedia [↩]
- Data explorer – Age of consent for sexual activity with an adult (europa.eu) [↩]
- file (unicef.org) [↩]
- The age of sexual consent – PubMed (nih.gov) [↩]
- Data explorer – Age at which children can marry with consent of a public authority and/or parents (europa.eu) [↩]
- Marriage in the United States – Wikipedia [↩]
- Marriage in England and Wales – Wikipedia [↩]
- (4:6) An-Nisa | (৪:৬) আন-নিসা-অনুবাদ/তাফসীর (hadithbd.com) [↩][↩]
- তাফসীরে জালালাইন; খন্ড নংঃ ১ পৃষ্ঠা নংঃ ৭৭১; ইসলামীয়া কুতুবখানা প্রকাশনি [↩]
- তাফসীর ই জালালাইন; পৃষ্ঠা নং; ২৮৬ [↩]
- তাফসীরে আনওয়ারুল কুরআন; খন্ড; ১, পৃষ্ঠা; ৫৯৩ [↩]
- Surah An-Nisa – 1-176 – Quran.com [↩]
- তাফসীরে তাবারী; খন্ড নং; ৭, পৃষ্ঠা নং; ৪৫ [↩]
- তাফসীরে তাবারী; খন্ড নং; ৭, পৃষ্ঠা নং; ৩৯ [↩]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর; খন্ড ৪; পৃষ্ঠা নং; ২৮৪-২৮৭ [↩]
- বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন; খন্ডঃ ১, পৃষ্ঠা; ৪৩১-৪৩২ [↩]
- If any of the signs of puberty appear in a boy, he becomes accountable – Islam Question & Answer (islamqa.info) [↩]
- At What Age Is Hijab Mandatory? – Islam Question & Answer (islamqa.info) [↩]
- Signs of male and female puberty (islamweb.net) [↩]
- Blog (Islam) – Wikipedia [↩]
- সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)| হাদিস:৫০৬৬ | Sahih al-Bukhari, Hadith No. 5066 (hadithbd.com) [↩]
- সুনান ইবনু মাজাহ| হাদিস:২৩৪১ | Sunan ibn Majah, Hadith No. 2341 (hadithbd.com) [↩]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)| হাদিস:৩১৩৬ | Mishkat al-Masabih, Hadith No. 3136 (hadithbd.com) [↩]
- সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)| হাদিস:৫১৩৬ | Sahih al-Bukhari, Hadith No. 5136 (hadithbd.com) [↩]
- সুনান ইবনু মাজাহ| হাদিস:১৮৭৯ | Sunan ibn Majah, Hadith No. 1879 (hadithbd.com) [↩]
- শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪২২ [↩]
- Is it acceptable to marry a girl who has not yet started her menses? – Islam Question & Answer (islamqa.info) [↩][↩]
- সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)| হাদিস:৫১৩৮ | Sahih al-Bukhari, Hadith No. 5138 (hadithbd.com) [↩][↩]
- শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪২২ [↩]
- সুনান ইবনু মাজাহ| হাদিস:৩৩২৪ | Sunan ibn Majah, Hadith No. 3324 (hadithbd.com) [↩][↩][↩]
- ইবনে বাত্তাল (রহ); শরহে সহীহ বুখারী; ৭ম খন্ড; ১৭২ [↩]
- সহীহ আত তিরমিযী; হাদিস নং; ১১০৯; পৃষ্ঠা নং; ৪০১ [↩]
- সুনান ইবনু মাজাহ| হাদিস:৩৩২৪ | Sunan ibn Majah, Hadith No. 3324 (hadithbd.com) [↩]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)|হাদিস:৪৯৩৩ | Sunan Abu Dawood, Hadith No. 4933 (hadithbd.com) [↩]
- ص91 – كتاب سير أعلام النبلاء ط الرسالة – الإمام الشافعي محمد بن إدريس بن العباس – المكتبة الشاملة (shamela.ws) [↩]
- ص268 – كتاب التحقيق في أحاديث الخلاف – مسائل الشهادة – المكتبة الشاملة (shamela.ws) [↩]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)| হাদিস:৪৯৩২ | Sunan Abu Dawood, Hadith No. 4932 (hadithbd.com) [↩]
- Battle of Khaybar | Islamic history | Britannica [↩]
- Expedition of Tabuk – Wikipedia (archive.is) [↩]
- Seattle woman in love with her plastic DOLL on My Strange Addiction | Daily Mail Online [↩]
- What Age Do Girls Outgrow Dolls? – Mamapedia™ [↩]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)| হাদিস:৪৯৩৩ | Sunan Abu Dawood, Hadith No. 4933 (hadithbd.com) [↩]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)| হাদিস:৩১২৯ | Mishkat al-Masabih, Hadith No. 3129 (hadithbd.com) [↩]
- মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)| হাদিস:৩২৬৫ | Mishkat al-Masabih, Hadith No. 3265 (hadithbd.com) [↩]
- সুনান ইবনু মাজাহ| হাদিস:২০৫৩ | Sunan ibn Majah, Hadith No. 2053 (hadithbd.com) [↩]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর; খন্ড; ১৫, পৃষ্ঠা; ৭৭৯ [↩]
- তাফহিমুল কুরআন; সূরা আল আহযাব; পৃষ্ঠাঃ৩৮ [↩][↩]
- তাফসীরে মারেফুল কুরআন; পৃষ্ঠা নং ১০৭৪-১৭৫ [↩]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর; খন্ড; ১৫, পৃষ্ঠা; ৭৮০ [↩]
- সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)| হাদিস:৫২৫৪ | Sahih al-Bukhari, Hadith No. 5254 (hadithbd.com) [↩]