Insight Zone

কুরআন কি সমতল পৃথিবীকে সমর্থন করে?

কুরআন কি সমতল পৃথিবীকে সমর্থন করে?

আল্লাহ সুবানাহুওয়া তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেন, 

অতঃপর তিনি যমীনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।[ref] (79:30) An-Nazi’at | (৭৯:৩০) আন-নাযি’আত-অনুবাদ/তাফসীর (hadithbd.com) [/ref]

আর যমীনকে আমি বিস্তৃত করেছি এবং তাতে সুদৃঢ় পাহাড় স্থাপন করেছি। আর তাতে উৎপন্ন করেছি সকল প্রকার বস্তু সুনির্দিষ্ট পরিমাণে।[ref] সূরা আল হিজর; ১৫ঃ১৯ [/ref]

যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিছানা, আর তাতে তোমাদের জন্য ক’রে দিয়েছেন চলার পথ। আর আকাশ থেকে তিনি পানি বর্ষণ করেন আর তা দিয়ে আমি বিভিন্ন লতা-যুগল উদগত করি যার প্রত্যেকটি অন্যটি থেকে আলাদা।[ref] সূরা ত্ব-হা; ২০ঃ৫৩ [/ref]

যিনি যমীনকে তোমাদের জন্য শয্যা বানিয়েছেন এবং তাতে তোমাদের জন্য বানিয়েছেন চলার পথ, যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার।[ref] সূরা আয-যুখরুফ; ৪৩ঃ১০ [/ref]

আর আমি যমীনকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক প্রকারের সুদৃশ্য উদ্ভিদ উদগত করেছি।[ref] সূরা কাফ; ৫০ঃ৭ [/ref] 

আর আমি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছি। আমি কতইনা সুন্দর বিছানা প্রস্তুতকারী![ref] সূরা আয-যারিয়াত; ৫১ঃ৪৮ [/ref]

অতঃপর তিনি যমীনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।[ref] সূরা আন-নাযি’আত; ৭৯ঃ৩০ [/ref]

আর যমীনের দিকে, কীভাবে তাকে বিছিয়ে দেয়া হয়েছে?[ref] সূরা আল-গাশিয়াঃ; ৮৮ঃ২০ [/ref]

আমি কি পৃথিবীকে শয্যা (রূপে) নির্মাণ করিনি?[ref] সূরা আন-নাবা; ৭৮ঃ৬ [/ref]

নাস্তিক ও অমুসলিমদের অভিযোগ হলো যে, পবিত্র কুরআনের উক্ত আয়াত সমূহে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা পৃথিবীকে সমতল বলেছেন। কিন্তু বিজ্ঞান বলে পৃথিবী গোলাকার । তাই কুরআনে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ।) আসলেই কি পবিত্র কুরআন অনুযায়ী পৃথিবীর আকৃতি সমতল?

কুরআন পৃথিবীকে সমতল বলে নাকি গোলাকার বলে সেই উত্তরে যাওয়ার আগে একটি বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখা প্রয়োজন। বিজ্ঞান কিছু বললে তা সত্য আর বিজ্ঞান যা বলেনা তা মিথ্যা ভুল! এমন চিন্তাধারার সাথে বিজ্ঞানের কি কোন সম্পর্ক আছে? বিজ্ঞান কি সত্য নির্ণয়ের মাধ্যম? উত্তর হলো, না। বিজ্ঞান কখনোই সত্য বা নিশ্চিতভাবে কিছু বলে না। যার ফলে আমরা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলোর মধ্যে নানারকম বৈপরীত্য দেখতে পায়। এমন অনেক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব রয়েছে যেগুলো একটা সময় খুবই শক্তিশালী বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে বিবেচিত হতো কিন্তু পরবর্তীতে সেই তত্ত্বগুলোই আবার বৈজ্ঞানিক অন্য কোন তত্ত্বের মাধ্যমে ভুল প্রমাণিত হয়েছে।  বৈজ্ঞানিক থিওরি প্রদানের অন্যতম একটি শর্ত হলো পর্যবেক্ষণ। তাই পর্যবেক্ষণ বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব পরিবর্তন হয়। 

উপরিউক্ত আয়াত সমূহে পৃথিবীর আকৃতিকে সমতল বলা হয়নি। এর সপক্ষে যুক্তি সমূহ নিন্মে উপস্থাপন করা হলো;

পৃথিবীর আকৃতি নয়ে কুরআন যা বলে

তিনি যথাযথভাবে আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। তিনি রাতকে দিনের উপর এবং দিনকে রাতের উপর জড়িয়ে দিয়েছেন এবং নিয়ন্ত্রণাধীন করেছেন সূর্য ও চাঁদকে। প্রত্যেকে এক নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলছে। জেনে রাখ, তিনি মহাপরাক্রমশালী, পরম ক্ষমাশীল।[ref] সূরা আয যুমারঃ ৩৯ঃ৫ [/ref] 

আয়াতে تَكْوِيْرٌ শব্দের অর্থ এক বস্তুকে অপর বস্তুর উপর পেঁচিয়ে বা জড়িয়ে দেওয়া। lane’s lexicon dictionary তে এই শব্দের অর্থ করা হয়েছে, মাথার উপর পাগড়ি ঘোরানো।[ref] *An Arabic-English lexicon (quranic-research.net) [/ref] [ref] The Quranic Arabic Corpus – Word by Word Grammar, Syntax and Morphology of the Holy Quran [/ref] [ref] يكور In English – Translation and Meaning in English Arabic Dictionary of All terms Page 1 (almaany.com) [/ref]

আয়াতটিতে যে আরবি শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে সেটি হলো “يُكَوِّرُ”। এর অর্থ এক বস্তু কে অপর বস্তুর উপর পেচিয়ে দেওয়া। যেমনটা মাথার পাগড়ির ক্ষেত্রে বুঝানো হয়।আমরা ভালোভাবেই জানি, পাগড়ি কিভাবে গোলাকারভাবে প্যাঁচানো হয়। এই আয়াতে বলা হচ্ছে , রাত্রি আনয়ন করে দিনকে ঢেকে দিয়ে তার আলো শেষ করে দেওয়া এবং দিনকে রাত্রির পেঁচিয়ে বা জড়িয়ে দেওয়ার অর্থ হল, দিন আনয়ন করে রাত্রিকে ঢেকে দিয়ে তার অন্ধকার শেষ করে দেওয়া। এ ঘটনা কেবল পৃথিবী গোলাকার হলেই ঘটতে পারে। এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে পৃথিবীর আকৃতি গোল । 

তুমি কি দেখনি যে, আল্লাহ রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান? আর তিনি সূর্য ও চাঁদকে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই চলছে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। আর নিশ্চয় তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত।[ref]সূরা লুকমানঃ ৩১ঃ ২৯ [/ref]

আয়াতটিতে “يُولِجُ শব্দের অর্থ  প্রবেশ করান।[ref] يولج In English – Translation and Meaning in English Arabic Dictionary of All terms Page 1 (almaany.com) [/ref] [ref] The Quranic Arabic Corpus – Word by Word Grammar, Syntax and Morphology of the Holy Quran [/ref] অর্থাৎ, রাত ধীরে ধীরে এবং ক্রমান্বয়ে দিনে রূপান্তরিত হয়। অনুরুপভাবে, দিন ধীরে ধীরে এবং ক্রমান্বয়ে রাতে পরিবর্তিত হয়। অর্থাৎ, দিন এবং রাত্রির সংঘটন হওয়া। আর এই প্রাকৃতিক ঘটনা তখনই সংঘটিত হতে পারে যদি পৃথিবীর আকৃতি গোলাকারের ন্যায় হয় অর্থাৎ পৃথিবী গোলক হওয়ায় তার নিজস্ব অক্ষের উপর ঘূর্ণায়মানের ফলে দিবা-রাত্রি সংঘটিত হয়।

আমরা জানি যে, পৃথিবী সর্বদা ঘূর্ণায়মান। পৃথিবী নিজ অক্ষের চারদিকে দিনে একবার নির্দিষ্ট গতিতে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করে। পৃথিবীর এই আবর্তন গতিই দৈনিক গতি বা আহ্নিক গতি নামে পরিচিত। নিজ অক্ষের চারদিকে আবর্তন করতে পৃথিবীর সময় লাগে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড বা ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ এক দিন। একটা অন্ধকার ঘরে যদি আপনি একটা মোমবাতির সামনে একটা বল রাখেন, বলের এক পাশে থাকবে আলোকিত অন্য পাশে অন্ধকার এবং কিছু জায়গায় হালকা হালকা অন্ধকার। এখন যদি বলটা প্রতিনিয়ত ঘুরতে থাকে তাহলে কি হবে? যে জায়গাটা আলোকিত ছিল সেটা ধীরে ধীরে অন্ধকারে যেতে থাকবে। দুপুর থেকে বিকেলে গড়াবে, বিকেল থেকে সন্ধ্যায় আর একসময় পুরোপুরি অন্ধকার বা রাত। ঠিক এভাবেই পৃথিবীর কোনো জায়গায় দিন বা রাত হয়। আর যদি পৃথিবী চ্যাপ্টা হতো তাহলে হঠাৎ করে রাত দিনে এবং দিনও হঠাৎ করে রাতে রূপান্তরিত হতো। যদি সমতল হতো তাহলে দিন বা রাত বলে পৃথক কিছু থাকতো না একই সঙ্গে। সবসময় সমগ্র পৃথিবী একই রকমের আলো পেত।

রাত দিন সংগঠিত হওয়ার ভিডিও। 

তিনিই দু’টি উদয় স্থান ও দু’টি অস্তাচলের নিয়ন্ত্রক।[ref] সূরা আর-রাহমানঃ ৫৫ঃ১৭ [/ref]

এখানে দু’টি উদয় স্থান ও দু’টি অস্তাচল” বলতে, পৃথিবীর দুই গোলার্ধের উদয়াচল ও অস্তাচল বোঝানো হয়েছে। আমরা জানি পৃথিবী দুই গোলার্ধে বিভক্ত; একটা উত্তর গোলার্ধ, আরেকটা দক্ষিণ গোলার্ধ। এখন উত্তর গোলার্ধে যখন সূর্য উদয় হয় দক্ষিণ গোলার্ধে তখন সূর্য অস্ত যায়। আবার যখন দক্ষিণ গোলার্ধে যখন সূর্য উদয় হয় উত্তর গোলার্ধে তখন সূর্যাস্ত যায়। অর্থাৎ, উভয় গোলার্ধে একে-অন্যের বিপরীত অবস্থা প্রকাশ করে। এভাবে পৃথিবীর দুই গোলার্ধের উদয়াচল ও অস্তাচল তখনই হওয়া সম্ভব যখন পৃথিবীর আকৃতি সমতল না হয়ে গোলাকার হবে। তাই এই আয়াত থেকেও এটাই প্রতিয়মান যে, মহান আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীর গোলাকার আকৃতির কথা জানিয়ে দিয়েছেন বহু আগেই।

প্রাচীন তাফসীর ও স্কলারদের মত

উপরিউক্ত আয়াতসমূহের ব্যখ্যায় প্রাচীন তাফসীর গুলোতে উল্লেখ করেছে, জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছে বলতে বুঝানো হয়েছে যে ,জমিনকে আমাদের বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে।

তাফসিরে আহসানুল বয়ানে ৭৯ঃ৩০ আয়াতের ব্যখ্যায় বলা হয়েছে,

সমতল ও বিস্তিত করার মানে হল, পৃথিবীকে সৃষ্টির বাসোপযোগী করার জন্য যে সমস্ত জিনিসের প্রয়োজন আল্লাহ তার প্রতি গুরুত্ব দিলেন। যেমন, জমিন থেকে পানি নির্গত করলেন অতঃপর তা হতে নানা খাদ্যসামগ্রী উৎপন্ন করলেন। পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ মজবুতভাবে জমিনে গেড়ে দিলেন যাতে জমিনটা না হিলে।[ref] Tafsir Surah An-Nazi’at – 30 – Quran.com [/ref]

২০ঃ৫৩ এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসীরে বলা হয়েছে,

মহান আল্লাহ যমীনকে বিছানারূপে বানিয়ে দিয়েছেন, যেন তোমরা তার উপর স্থির থাকতে পারো এবং ওরই উপর শুইতে, বসতে ও চলা ফেরা করতে পারো। তিনি যমীনে তোমাদের চলা ফেরা ও সফর করার জন্যে পথ বানিয়ে দিয়েছেন, যাতে তোমরা পথ ভুলে না যাও এবং সহজেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারো।[ref] https://quran.com/20:56/tafsirs/bn-tafseer-ibn-e-kaseer [/ref]

স্কলারগণ সর্বসম্মতভাবে সম্মত হন যে পৃথিবীটি গোলাকার, কিন্তু মানুষের চোখে এটি সমতল বলে মনে হয়, কারণ এটি খুব বড় এবং এর গোলাকারতা বা বক্রতা কাছাকাছি দূরত্বে দেখা যায় না। সুতরাং যিনি দাঁড়িয়ে দেখেন তিনি এটিকে সমতল হিসাবে দেখেন, কিন্তু সামগ্রিকভাবে দেখলে, বাস্তবে এটি গোলাকার।

ইবনে হাযম (রহ.) বলেন:

কুরআন এবং সুন্নাহর প্রমাণগুলি নির্দেশ করে যে পৃথিবী গোলাকার।[ref]  https://www.google.com/amp/s/islamqa.info/amp/en/answers/211655 [/ref]

আর-রাযী (রহ.) বলেন;

যদি বলা হয়: “এবং আমরা যে পৃথিবী ছড়িয়ে দিয়েছি” শব্দগুলো কি ইঙ্গিত করে যে এটি সমতল?আমরা উত্তর দেব: হ্যাঁ, কারণ পৃথিবী, যদিও এটি গোলাকার, একটি বিশাল গোলক, এবং এই বিশাল গোলকের প্রতিটি ছোট অংশ, যখন এটির দিকে তাকানো হয়, তখন এটি সমতল বলে মনে হয়। যেহেতু এই ক্ষেত্রে, এটি তারা যা বিভ্রান্তির কথা বলেছে তা দূর করবে। এর প্রমাণ হল সেই আয়াত যেখানে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন (অর্থের ব্যাখ্যা): “এবং পাহাড়গুলি খুঁটি হিসাবে” [আন-নাবা 78:7]। তিনি তাদের আওতাদ (খোঁটা) বলেছেন যদিও এই পর্বতগুলির বিশাল সমতল পৃষ্ঠ থাকতে পারে। এবং এই ক্ষেত্রেও একই কথা সত্য।[ref] তাফসির আর-রাযী, 19/131 [/ref]

শায়খুল-ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেছেন,

জেনে রাখুন যে পৃথিবী গোলাকার। কিতাব, সুন্নাহ (ভবিষ্যদ্বাণীমূলক ঐতিহ্য) এবং আলেমদের ঐক্যমত অনুযায়ী কক্ষপথগুলি বৃত্তাকার। ফালাক (কক্ষপথ) শব্দের অর্থ হল এটি গোলাকার।[ref] https://www.google.com/amp/s/www.islamweb.net/amp/en/fatwa/87767/ [/ref]

ইবনে তাইমিয়া (রহ) আরো বলেন,

আবুল হুসাইন আহমাদ ইবন জাফর ইবনুল মুনাদি(র.) (ইমাম আহমাদ(র.) এর দ্বিতীয় স্তরের ছাত্র) বলেছেন, এ প্রসঙ্গে আলেমগণের মাঝে কোন দ্বিমত নেই যে, পৃথিবী গোলকের ন্যায়।[ref] https://shamela.ws/book/7289/12643 [/ref]

শাইখ রাফি‘আদ-দ্বীন ইবন ওয়ালিউল্লাহ আল-দাহলভী (রহঃ) তাঁর কিতাব আত-তাকমিলে বলেছেন;

“কেউ কেউ হয়তো শব্দগুলি এভাবে বুঝতে পারে যেমন (পৃথিবীকে বিছানা হিসাবে তৈরি করেছেন” [আন-নাবা 78:6], “তিনি পৃথিবী ছড়িয়ে দিয়েছেন” [আন-নাজিআত 79:30] এবং “…কীভাবে এটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে…” [আল-গাশিয়াহ 88: 20]) এই শব্দগুলোর অর্থ হল এটি সমতল, যেখানে পণ্ডিতগণ নিশ্চিত করেছেন যে এটি সঠিক প্রমাণের ভিত্তিতে গোলাকার, তাই মনে করা হয় যে একটি দ্বন্দ্ব রয়েছে। এটি এই সত্য দ্বারা খণ্ডন করা যেতে পারে যে এর দৃশ্যমান (পৃথিবীর) অংশটি (এটির উপর দাঁড়িয়ে থাকা একজন ব্যক্তির জন্য) সমতল দেখায়, কারণ একটি বৃত্ত যত বড় হয়, এটি তত বেশি ছড়িয়ে পড়ে, তাই আমরা বলতে পারি যে এটির ভিত্তিতে সমতল। এটির সেই অংশটি যা আমাদের কাছে দৃশ্যমান, এবং এটি সম্পূর্ণরূপে বৃত্তাকার, যুক্তিবাদী চিন্তার ভিত্তিতে।” (তাফসিরে সিদ্দিক হাসান খান তার থেকে উদ্ধৃত করেছেন, ফাতহুল বায়ান, 15/208)[ref] https://www.google.com/amp/s/islamqa.info/amp/en/answers/211655 [/ref]

শাইখ বিন বায (রহি) ‘ পৃথিবী গোলাকার নাকি সমতল’? এই প্রশ্নের জবাবে বলেন যে,

পণ্ডিতদের মতে পৃথিবী গোলাকার। ইবনে হাযম এবং অন্যদের একটি দল বর্ণনা করেছেন যে পণ্ডিতগণ সর্বসম্মতভাবে একমত যে এটি (পৃথিবী) গোলাকার।… আল্লাহ আমাদের জন্য এর সর্বোচ্চ অংশ প্রসারিত করেছেন এবং এতে পাহাড়,পর্বত স্থাপন করেছেন  এবং তাতে প্রাণী ও সাগরকে আমাদের জন্য রহমত হিসাবে স্থাপন করেছেন। এই কারণে তিনি বলেছেন: আর যমীনের দিকে, কীভাবে তাকে বিছিয়ে দেয়া হয়েছে?[আল-গাশিয়া: 20][ref] https://binbaz.org.sa/fatwas/5966/كروية-الارض [/ref]

জাকির নায়েক কি দাহাহা শব্দের ভুল ব্যাখ্যা করেছে?

অতঃপর তিনি যমীনকে বিস্তীর্ণ করেছেন।[ref] সূরা আন-নাযি’আত; ৭৯ঃ৩০ [/ref]

এই আয়াতে دَحٰٮهَا শব্দের অর্থ ছড়িয়ে দেওয়া।[ref] المعاني – سورة النازعات – آية 30 – تحليل ومعانى دَحَاهَا في القرآن الكريم, Meaning of دَحَاهَا in Holy Quran (almaany.com) [/ref] বিস্তিত, প্রসারিত ,ডিমের আকারের,সম্প্রসারিত,ছড়িয়ে পড়া,বৃত্তাকার তৈরি,সুষম।[ref] دحاها‎ (Arabic): meaning, translation – WordSense Dictionary [/ref] এখানে অতঃপর শব্দটি আছে ,তার মানে পৃথিবীর কোনো আকৃতিতে ছিলোনা, কোনো কিছুর অস্তিত্ব ছিলনা। (২৭-৩২ নং আয়াত পড়লেই বুঝা যাবে ) ফলে আল্লাহ মহাবিশ্ব সৃষ্টির পর পৃথিবীকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এনেছে। এই আয়াতে ছড়িয়ে দেওয়া মানে জমীনকে বা পৃথিবীকে আমাদের বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে। অর্থাৎ, পৃথিবীকে সৃষ্টির পর বাসোপযোগী করার জন্য যে সমস্ত জিনিসের প্রয়োজন আল্লাহ তাআলা তার প্রতি গুরুত্ব দিলেন। যেমন, যমীন থেকে পানি নির্গত করলেন অতঃপর তা হতে নানা খাদ্যসামগ্রী উৎপন্ন করলেন। পাহাড়সমূহকে পেরেকস্বরূপ মজবুতভাবে যমীনে গেড়ে দিলেন যাতে যমীনটা না হিলে। যেমন, আগামী আয়াতসমূহে এর বর্ণনা রয়েছে।[ref] তাফসীরে আহসানুল বায়ান [/ref]

প্রাচীনকালের স্কলারগণ دَحٰٮهَا শব্দের অর্থ করেছেন, ছড়ানো বা বিছিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ, পৃথিবীকে আমাদের বসবাসের উপযোগী করা। কিন্তু আধুনিককালের কিছু স্কলারগণ, যেমন জাকির নায়েক  دَحٰٮهَا শব্দের অর্থ করেছেন, ডিম্বাকৃতি, গোলাকার। তাই নাস্তিকদের অভিযোগ জাকির নায়েক دَحٰٮهَا শব্দের ভুল অর্থ করেছেন। কিন্তু জাকির নায়েক বা আধুনিক কালের যেসব স্কলারগণ শব্দের অর্থ ডিম্বাকৃতি, গোলাকার করছেন তারা ভুল অর্থ করেনি। কারণ দুটো অর্থই সঠিক। অর্থ দুটি ভালো করে লক্ষ্য করুন, 

1.And after that, He spread the earth. 2. He made the earth egg shape.

Earth শব্দের অর্থ , পৃথিবী ,মাটি, ভূমি , জমি, ইত্যাদি।[ref] Google Translate [/ref] এখানে Spread (ছড়ানো) শব্দটাই ঠিক করে দিবে যে Earth মানে কি জমিন বুঝানো হয়েছে নাকি পৃথিবী বুঝানো হয়েছে। যদি কেউ Earth শব্দের অর্থ জমিন ধরে নেই তাহলে Spread অর্থ হবে বিস্তীর্ণ বা বিছিয়ে দেওয়া। ফলে এই আয়াতের অর্থ হবে, এরপর আল্লাহ জমিনকে বিস্তীর্ণ করেছেন আমাদের বসবাসের জন্য। যদি কেউ Earth অর্থ পৃথিবীর আকৃতি ধরে নেই তাহলে Spread অর্থ হবে ডিম্বাকৃতি বা গোলাকার। ফলে এই আয়াতের অর্থ হবে, এরপর আল্লাহ পৃথিবীকে গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি করেছেন। আল্লাহ তা;আলা পৃথীবীর আকৃতিকে যেমন গোলাকার করেছেন তেমনি জমনিনকে ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের বসবাসের উপযোগী করেছেন। 

আমি ভূমিকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালার ভার স্থাপন করেছি এবং তাতে সর্বপ্রকার নয়নাভিরাম উদ্ভিদ উদগত করেছি।[ref]সূরা কাফ; ৫০:৭[/ref]

আরবি ভাষাতে একটা শব্দের অনেকগুলা অর্থ রয়েছে। আমাদের বাংলা ভাষা ও ইংরেজি ভাষাতেও একই শব্দের আলাদা আলাদা অর্থ আছে। যেমন, 1. উত্তর দিকে বাতাস এসছে। 2. সে পরীক্ষায় সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। এখানে দুইটা বাক্যে ‘উত্তর’ শব্দটি আছে। কিন্তু শব্দের অবস্থান অনুযায়ী দুইটা শব্দ আলাদা আলাদা অর্থ প্রকাশ করেছে।
আবার ইংরেজিতে, 1. The doctors said she had only six months to liv. 2. The match will be televised live. এখানে live শব্দটি দুইটা ব্যাকে আছে, তবে অবস্থান অনুযায়ী আলাদা আলাদা অর্থ প্রকাশ করেছে। তাই একটা শব্দের ব্যাখ্যা বা অর্থ যদি আলাদা আলাদা নেওয়া তাহলে সেটাকে ভুল বলা যায় না।

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
Notify of
guest
0 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Scroll to Top
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x